দাস ব্যবসার সঙ্গে ওয়াল স্ট্রিটের ৪০০ বছরের গোপন সম্পর্ক
নূর মাজিদ : যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান দাস আনার ৪ শতক পূর্ণ হয়েছে গত আগস্টে। ১৮৬৫ সালে দেশটিতে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করা হলেও, এর অর্থনৈতিক প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। রয়ে গেছে দাস প্রথার সঙ্গে জড়িত বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান। মার্কিন ইতিহাসবেত্তাদের মতে, এই প্রভাব এতো সুদূরপ্রসারী যা এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। বিবিসি
নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক কেন্দ্র থেকে একটু দূরেই ২৫ জন লোককে অতীত দাসব্যবসার সঙ্গে জড়িত ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখাচ্ছিলেন দামারিস ওবি। তিনি নিউইয়র্কের দাসত্ব এবং ভূগর্ভস্থ রেলপথ বিষয়ক একজন ট্যুর গাইড। তিনি পর্যটকদের এমন একটি স্থান দেখান যা নিউইয়র্কের দাস বেচাকেনার প্রধান কেন্দ্র ছিলো। এর মাত্র দুই সড়ক দূরেই অবস্থিত নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। ওবি বলেন, দাস ব্যবসা শুধু কালো মানুষদের ইতিহাস নয়। এটা আমেরিকান অর্থনৈতিক ইতিহাসের উৎপত্তি এবং ভিত্তির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ওবি ইনসাইড আউট ট্যুরস নামের যে কো¤পানিতে চাকরি করেন তার প্রধান স্টেসি টোসেইন্ট বলেন, দাসব্যবসা নিউইয়র্কের জন্যে কতো গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, অনেক পর্যটক তা জেনে অবাক হন। তারা অনেকেই জানতেন না যে, যে দেয়ালের নামে ওয়ালস্ট্রীটের নামকরণ হয়েছে, সেই দেয়াল ক্রীতদাসদের শ্রমেই তৈরি হয়।
অষ্টাদশ শতকের মার্কিন কলোনীগুলোর উৎপাদিত তুলার ৪০ শতাংশ অর্থ নিউইয়র্কে আসতো। এই অর্থ আয়ের প্রধান মাধ্যম ছিলো নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাহাজ এবং বীমা কো¤পানিগুলো। আর সকলেই জানেন তুলাচাষের জন্যে ব্যাপক আকারে ক্রীতদাস ব্যবহার করা হতো।
ইতিহাসবিত্তেরা প্রচলিত আর্থিকখাতের সঙ্গে দাসব্যবসার আরো ঘনিষ্ঠ ও সরাসরি সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক ইতিহাস বিভাগের এমিরেটস অধ্যাপক গেভিন রাইট বলেন, যে সকল মার্কিন কলোনিগুলোতে দাসের সংখ্যা কম ছিলো, তারাও দাস ব্যবসায়ী কলোনিগুলোর সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত ছিলো। এমনকি দাস ব্যবসায়ী এবং ক্রীতদাস মালিকদের সঙ্গে তারা সরাসরি ব্যবসা করতো।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পর আজকের যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহর ও অর্থনৈতিক স্থাপনা ক্রীতদাসদের শ্রমের মাধ্যমেই গড়ে তোলা হয়। অর্থনৈতিক শস্য যেমন তুলা, আখ এবং তামাক চাষেও তাদের বাধ্য করা হয়। এসব শস্য আরো উত্তরের উপনিবেশ এবং ইউরোপে সরাসরি জাহাজে করে রপ্তানি করা হতো। এই রপ্তানি বাণিজ্য কলোনিগুলোর ব্যাংকিং, বীমা ব্যবসায়কে শক্তিশালী করে। মুনাফাজনক ক্রীতদাস ব্যবসায়ের জন্যে এসব প্রতিষ্ঠান আফ্রিকা থেকে দাস ধরে আনার বাণিজ্যেও অর্থায়ন করতো। অধিকাংশ সময় বীমা কো¤পানিগুলো দাস ব্যবসায়ী জাহাজের মালিকদের পরিবহন ঝুঁকি ভাগাভাগি করে নিতো। বীমা থাকার কারণে দাসভর্তি জাহাজ ডুবি হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো। নিউইয়র্ক লাইফ, এআইজি এবং অ্যাটেনার মতো নিউইয়র্ক পুঁজিবাজারের কিছু শীর্ষ বীমা কো¤পানি এসব ইন্স্যুরেন্স পলিসির ব্যবসা করে। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে বহু মার্কিন ব্যাংক দাসভিত্তিক কৃষি খামারগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে বিক্রি করেছে। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব