চীনা ঋণ থেকে সর্তক থাকার পরামর্শ সিপিডির
ফাতেমা আহমেদ : চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) কার্যক্রম সম্প্রসারিত হলে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তবে প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে। নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চীনের অবস্থান মেনে নিতে হবে। সারাবাংলা, জাগরণ, কালের কণ্ঠ অনলাইন
বেল্টের সুযোগ সুবিধার সবক্ষেত্রেই আরও বেশি দরকষাকষি করতে হবে। রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড: তুলনামূলক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া আছে আমরা তা নেবো। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেনো ৩ শতাংশ দেবো? সুদ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। ‘
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যদেশের সঙ্গে যেন দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিচার বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। একইসঙ্গে প্রকল্প হতে হবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায়।’
এশিয়ার বিশ্বায়নের এ প্লাটফর্ম দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেয়ার ফোরাম হতে পারে। আমরা এ প্লাটফর্মে (বিআরআই) অংশ নিয়েছি। যার মাধ্যমে দেশ লাভবান হবে। এ উদ্যোগের ফলে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। বেশ কিছু বিষয়ে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের সামরিক জোটে যোগদান এড়িয়ে চলছে। নিজেদের স্বার্থরক্ষা করেই অন্য জোটে যোগদান করছি। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা চীনের বিআরআই-এ যোগ দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা লাভবান হবো বলে আশা করি। এ উদ্যোগে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়বে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন। ওই সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সংলাপে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রির্সাচ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মঞ্জুর ইলাহী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, চীনের উদ্যোগে গঠিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বায়নে নেয়া কর্মসূচি। সর্বাধিক দেশ, বিনিয়োগ ও ব্যাপক জনসংখ্যাকে জড়িত করে এ অঞ্চলের বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প এখন বিআরআই। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান