পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডেঙ্গু মোকাবেলা অন্যতম চ্যালেঞ্জ
ফাতেমা আহমেদ ও কেএম নাহিদ : বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ। এর প্রকোপ থেকে বাঁচতে দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আর সঠিক বাস্তবায়ন। এসব বিষয় মাথায় রেখে এরই মধ্যে গবেষণা শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সময় টিভি, ইউএনবি, জাগোনিউজ, শীর্ষনিউজ
এমন বাস্তবতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তির কিছু দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। বরং তারা বলছেন, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বাহকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবেই প্রত্যন্ত এলাকাতেও মিলেছে এডিসের লার্ভা। এই সময়ে জনস্বাস্থ্যের জন্যে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু। মোকাবেলায় সারা দেশে দরকার স্বল্প, মধ্য আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন।
বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমদ বলেন, ‘এবার ডেঙ্গু যে মাপে হয়েছে। তাতে বেশ বড় ঝুঁকি সামনে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সাথে গুরুত্ব না দিলে, বিপদ বাড়বে।’
প্রাথমিক ঝক্কি সামলে এখন বিশেষ এলাকাগুলোতে চলছে জরিপের কাজ। এর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেবো।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, কিছুটা স্বস্তি হলেও, আশঙ্কা থেকে যায়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নির্ভর করছে প্রকৃতির ওপর।
এদিকে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আবারও বেড়েছে। এ যাবত ৬০ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে রবিবার নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন ৭৬১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ছাড়পত্রপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৯৭৭ জন।
ঢাকায় নতুন ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩১৪ ও ৪৩৮ জন। ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৪৪৭ ও ৫৩৯ জন। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিলো ৬০৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ৭৩ হাজার ৯১ জন।
বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত ভর্তিকৃত রোগী আছেন ৩ হাজার ২২৬ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৯২ জন। ঢাকার বাইরে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪ জন।
রাজধানীসহ সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা একদিন বাড়ে তো আরেকদিন কমে। এক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এ রকম বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়েশা আক্তার জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা একদিন কমছে তো আরেকদিন বাড়ছে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ৪৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৩৯ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন।
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা ও খুলনায় নারীসহ রোববার সকালে দুইজন মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাসিমা বেগম (৪৮) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৯ টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
তাছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সাড়ে ১১টায় আশিকুজ্জামান (৩৭) নামে এক ডেঙ্গুরোগী মারা গেছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ভোর সাড়ে ৫টায় আশিকুজ্জামানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মারা যান। তার বাড়ি মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলায়। সম্পাদনায় : কায়কোবাদ মিলন ও রাশিদ