* সরকার দাম না বাড়ালে, কমবে চাষের পরিমান মধ্যাঞ্চলে পাটের ‘দর পতনে’ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা
মধ্যাঞ্চল প্রতিনিধি : দেশের মধ্যাঞ্চলের মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও রাজবাড়ির হাট-বাজারগুলোতে পাটের দাম কমে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। চাষীরা বলছেন, এমনিতেই পাট উৎপাদনে পানি সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে উৎপাদন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে দাম কম হওয়ায় আগামীতে পাট চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষকরা। তবে পাটের দর পতনের কারণ হিসেবে চাষিদের সঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও ‘পাটের রং ভালো না হওয়ায়’ উৎপাদিত পাটের দরপতন হয়েছে বলে মনে করছে। এতে পাট চাষীরা কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, বর্তমানে ভালো মানের পাট মণপ্রতি ১৫শ টাকা থেকে ১৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি ঈদের আগেও মণপ্রতি পাট ২২শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল স্থানীয় বলে চাষিরা জানান।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীর চতুল ইউনিয়নের পাট চাষি আতিয়ার রহমান বলেন, এক মণ পাট উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে ১৩শ থেকে ১৪শ টাকা। এছাড়া পাট উৎপাদন মৌসুমে ডিজেল ও শ্রমিকের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি থাকে। এখন মণ প্রতি ২২শ থেকে ২৫শ টাকা হারে দর পেলে তাদের লাভ হতো। পাটের দরপতনের কারণ জানতে চাইলে আতিয়ার বলেন, ‘পাট পঁচাতে চাষিদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে পানির অভাবে। এই কারণেই পাটের রং ভাল থাকছে না। একই পানিতে বার বার অনেক পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাটের রং সোনালি আর থাকছে না। ফলে দামও কমে যাচ্ছে।’
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, এ বছর জেলায় মোট পাটের আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। এ বিপরীতে পাটের উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, পাটের উৎপাদন ভালো হলেও পানির অভাবে জেলার অনেক এলাকার চাষিরা পাট পঁচাতে পারেনি ভাল করে। যে কারণে পাটের রং ভাল হয়নি। এতে চাষিদের উৎপাদিত পাটের দর কম পাচ্ছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পাট চাষী আশুতোষ মন্ডল বলেন, এবার রাস্তার পাশের ডোবা নালার মধ্যে বার বার পাট জাগ দিচ্ছি। এতে পানি নষ্ট হয়ে পাটের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। ফলে দামও আমরা খুব কম পাচ্ছি।
দেশের মধ্যাঞ্চলের এসব জেলায় ভারতীয় (তোসা জিআর) ও দেশী (মাস্তে) জাতের পাটের আবাদ হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই তোসা জাতের বলে জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
ফরিদপুরের এম এইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডের পরিচালক মোহাসিন হোসাইন জানান, মৌসুম শুরুতে আমরা ২২শ বা তার বেশি দরে পাট কিনেছি। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যে মানের পাট আসছে তাতে সর্বোচ্চ ১৯৫০ টাকার বেশি দেওয়া যাচ্ছে না। একই ধরনের কথা জানালেন মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের পাট ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাজারে ভাল মানের পাট আসার সম্ভবানা এখন খুব কম। কারণ হিসেবে তারা বললেন, পানির সংকটে পরিস্কার পানিতে পাট কৃষকরা জাগ দিতে পারছে না। অল্প পরিমান একই পানিতে বার বার পাট জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। ফলে মধ্যাঞ্চলের কৃষকরা এবার পাটের আশ বিক্রিতে কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুনবেন। সম্পাদনা : প্রিয়াংকা আচার্য্য