‘ক্যাসিনো’ চালানোয় যুবলীগ নেতা খালেদ ভুইয়া অস্ত্র-ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও মাসুদ আলম : রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, বুধবার রাতে গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে তারা গ্রেপ্তার করেন। এ সময় তার বাসা থেকে ১টি অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও লাইসেন্স এর শর্ত ভঙ্গ করায় আরও ২টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
এদিন দুপুরে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র্যাব সদস্যরা। সন্ধ্যায় ওই ক্লাব থেকে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। ক্লাবে পাওয়া যায় মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। সেখান ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয় বলে সারোয়ার বিন কাশেম জানান। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ক্লাবে যুবলীগের কয়েকজন নেতা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর তাদের প্রভাব বাড়তেই থাকে। ক্লাবটিতে নিয়মিত মদ্যপানের আসর বসানোর পাশাপাশি হাউজি খেলা চালু করেন তারা। এরপর এখানে জুয়ার আসর অব্যাহতহারে বাড়তেই থাকে।
ইতিমধ্যেই জুয়ার আড্ডাগুলো সম্পর্কে সম্প্রতি প্রমাণসহ গোয়েন্দা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযান নামে র্যাব। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাদাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ বলে মন্তব্য করেন।
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ : রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে।
খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন তিনি। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।
জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন র্কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এই নেতা। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।