সাময়িক নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশে মাছের বিপ্লব হয়েছে বললেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
মতিনুজ্জামান মিটু : সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সব মাছের সংরক্ষণ, উৎপাদন ও আহরণ বেড়েছে। লাভবান হয়েছে আড়তদার আর টলার মালিকেরা। এতে জেলেরা কতটুকু লাভবান হয়েছে তা ভেবে দেখতে হবে। জেলেদের কেউ দুটি মাছ খেতে দিলে তা তারা বেচে অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনে। ধরলেও তারা ইলিশসহ ভাল মাছ খেতে পায় না।
বুধবার রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ সিআইসিসি মিলনায়তনে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখার প্রভাব পর্যালোচন এবং ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি-২০১৯ বাস্তবায়নে নাগরিক সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এসব কথা বলেন। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর ও সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট এ সংলাপ আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪০০ থেকে ৫০০ টনের টলার ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার তেল নিয়ে সমুদ্রে যায়। ১০ দিনের মাথায় এসব টলার মাছ নিয়ে ফিরে আসে। এভাবে ট্রলার মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করে। কাঁঠের বডির টলারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলেরা মাছ ধরে। অথচ এসব ট্রলারে জীবন রক্ষাকারী জ্যাকেটও খাকে না। বিষয়টি নিয়ে সরকার ভাবছে।
সংলাপে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারও ‘ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা-ইলিশের নিধনরোধে আগামী ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ২২ দিন সব ধরনের মাছধরা বন্ধ থাকবে। এসময় ইলিশের প্রজননক্ষেত্রের ৪টি পয়েন্টদ্বারা পরিবেষ্টিত ৭০০০ বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার সব নদনদীতে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ৪টি পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে; মীরসরাই ও চট্টগ্রামের মায়ানি, তজুমুদ্দিন ও ভোলার পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারের উত্তর কুতুবদিয়া এবং কলাপাড়া ও পটুয়াখালীর লতা চাপালী পয়েন্ট। আইনানুযায়ী সারাদেশে ইলিশ মাছের আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়বিক্রয় নিষিদ্ধ থাকবে।
সংলাপে বলা হয়, প্রতিবছর আশ্বিনমাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের ৪ দিন, পরের ১৭ দিন এবং পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা ২০১৭ সাল থেকে জারী রয়েছে। তবে ২০১১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১১ দিন এবং ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিলো ১৫ দিন। নিষেধাজ্ঞার আইন ভংগ করলে আইনভংগকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে ২ বছর সশ্রম কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেওয়া যাবে।
সংলাপে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আশিকুল্যা রফিক, মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান দিলদার আহমদ, মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজি আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি ড ইয়াহিয়া মাহমুদসহ বিভিন্ন মৎস্যজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী, জেলে, মৎস্যগবেষক, এনজিও, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, র্যাব, বনবিভাগের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। সভায় সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তরের পরিচালক ড মো. আবু হাছানাত ‘সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছধরা বন্ধের ফলাফল ও প্রভাব’ এবং আসন্ন মা-ইলিশ রক্ষা অভিযান-২০১৯’ বিষয়ে ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী পরিচালক মাসুদ আরা মমি পৃথক-পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।