আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
৪০ লাখ আবাসিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করে ৪৩০ মিলিয়ন ঘনফুট
শাহীন চৌধুরী: দেশের ৪০ লাখ আবাসিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করে ৪৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানির পর নতুন করে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও এখনো এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। গত ২০১০ সাল থেকে কার্যত বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, রান্নার জন্য সিলিন্ডার এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সহজলভ্য করা হবে। এলপিজি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। ফলে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমে যায়।
এদিকে গ্যাসের ঘাটতি প‚রণে এখন এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানি করা হচ্ছে। এলএনজির দাম কয়েক গুণ বেশি। ফলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় যে বাসাবাড়িতে এই আমদানি করা গ্যাস দেওয়া হবে না। এই গ্যাস ব্যবহার হবে শুধু শিল্প খাতে। স¤প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটি বাসাবাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কমিটি বলছে, এলপিজির চেয়ে এলএনজির দাম কম। তুলনাম‚লক ঝুঁকিমুক্ত। ফলে বাসাবাড়িতে নতুন করে পাইপলাইনে গ্যাস দেওয়া যেতে পারে।
এলএনজি আমদানিকে সামনে রেখে আবাসিক খাতে কোন গ্যাস সাশ্রয়ী ও নিরাপদ তা যাচাই করতে গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নির্দেশনায় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। চলতি বছরের ১৮ মার্চ কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের চেয়ে পাইপলাইনের গ্যাসই সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। কমিটি আরও বলেছে, আমদানি করা হলেও গ্রাহক পর্যায়ে এলপিজি থেকে এলএনজি ম‚ল্যের দিক দিয়ে ৬৫ শতাংশ সাশ্রয়ী। আর ওজনে ভারী বলে এলপি গ্যাসে অগ্নিকাÐের ঝুঁকি বেশি। তাই শহরাঞ্চলের জন্য বিশেষ করে ঘনবসতি এলাকায় পাইপলাইনের গ্যাসের ব্যবহার সুবিধাজনক।
এদিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় গত কয়েক বছরে বিতরণ কোম্পানিগুলোতে নতুন সংযোগের জন্য এক লাখের ওপর আবেদন জমা হয়েছে।
বর্তমানে এলএনসহ দৈনিক ৩২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সারাদেশে সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে এলএনজি থেকে আসছে ৫৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি ২৬৩০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে তোলা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে স্থাপিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সরবরাহ ক্ষমতা দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী বার্ষিক ১৫ লাখ টনের বেশি এলপিজি সরবরাহ করা দরকার। তবে আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ টন। এর মধ্যে ২০ হাজার টন এলপিজি সরকারি ভাবে বিক্রি হয়।
স‚ত্র জানায়, জ্বালানি উপদেষ্টার পরামর্শে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আবাসিকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে এলপিজির চেয়ে এলএনজি সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও বাসাবাড়িতে এখন পাইপলাইনের গ্যাসের দিকে ঝুঁকছে। গত ২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদনের ওপর একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এলএনজি আমদানির প্রেক্ষাপটে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় যেসব স্থানে গ্যাসের পাইপলাইন নেটওয়ার্ক রয়েছে সেখানে বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ দেওয়া যেতে পারে। ৯ মে ওই বৈঠকের কার্যপত্র চ‚ড়ান্ত হয়।
ওই কার্যপত্র চ‚ড়ান্ত হওয়ার পর ২১ মে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, আবাসিক, সিএনজি স্টেশন ও বাণিজ্যিক খাতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হলো। এসব খাতে সংযোগ বন্ধ থাকলেও তা এতদিন ছিল মৌখিক। এবার সেটা লিখিত আকারে জারি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এলএনজি আসার পর আবাসিকে নতুন সংযোগ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এখনও চ‚ড়ান্ত কিছু হয়নি। তিনি মনে করেন, বাসাবাড়িতে এলপিজি উত্তম সমাধান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এলপিজির দাম কমছে। তা ছাড়া পাইপলাইনে গ্যাসে বড় ধরনের অপচয় হয়, চুরিও হয়। এলপিজির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে না। সম্পাদনা : ইকবাল খান