আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে আজ থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
স্বপ্না চক্রবর্তী : বছরব্যাপী অপেক্ষার পালা শেষ করে শারদোৎসবের আগমনী সুর এখন বাঙালি সনাতন স¤প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি বয়ে যাক, দেবী দুর্গা এমন বার্তা নিয়েই ঘোড়ায় চড়ে আসছেন লোকালয়ে। আর তাই দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় মাতোয়ারা ভক্তক‚ল। বুধবার দেবীর বোধন শেষে আজ মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজা। পাঁচ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে এখন সাজসাজ রব। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয় অসম্প্রদায়িক চেতনায় পুরো বাঙ্গালি সামিল হবে এ উৎসবে।
বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সব মিলিয়ে পূজার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৮ টি। যা গত বছরের চাইতে ৪৮৩ টি বেশি। বিভাগ অনুযায়ী এবারের পূজার পরিসংখ্যান হলো ঢাকায় ৭ হাজার ২৭১ টি, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৪৫৬ টি, সিলেটে ২ হাজার ৫৪৫ টি, খুলনায় ৪ হাজার ৯৩৬ টি, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫১২ টি, রংপুরে ৫ হাজার ৩০৫ টি, বরিশালে ১ হাজার ৭৪১ টি ও ময়মনসিংহে ১ হাজার ৬৩২টি। চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগ ছাড়া বাকি ৪ বিভাগে পূজোর সংখ্যা বেড়েছে। এবার চট্টগাম জেলা সর্বোচ্চ ১৭৭৪ টি পূজা হচ্ছে। সর্বনি¤œ পূজার সংখ্যা বরিশাল মহানগরে ৩৮ টি।
আগামীকাল শনিবার হবে মহাসপ্তমী বিহিত পুজো, দেবীর নব পত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পুজো। রোববার মহাষ্টমী, কুমারী ও সন্ধিপুজো, সোমবার মহানবমী ও মঙ্গলবারে হবে বিজয়া দশমী বিহিত পুজো। পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী জানান, অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও বিজয়া শোভাযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দশমীর দিন সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা শেষে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। তিনি জানান, পূজার প্রাক্কালে মহানগর পূজা কমিটি ঢাকা মহানগরের ৪৯টি থানায় সাংগঠনিক মতবিনিময় করা হয়েছে। এবার ঢাকা মহানগরে পুজোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৭। গুলশান-বনানী, ধানমÐি, উত্তরা, সিদ্বেশ্বরী, সূত্রাপুর, খামারবাড়ী, কোতয়ালী মিরপুরসহ মহানগরীর বিভিন্ন মন্দিরে জাঁকজমকের সাথে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পুজোমন্ডপে নানাবিধ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার আহŸান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় উন্নয়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে সকলের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে দেশের চিরাচরিত সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি অক্ষুন্ন রেখে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহŸান জানিয়ে বলেন, বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সারাদেশে যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। তিনি শারদীয় দুর্গোৎসবের সাফল্য কামনা করেন।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ আপ্ত বাক্যে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করব।