বাংলাদেশ-ভারত সর্বকালের সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে, বললেন শেখ হাসিনা
ফাতেমা আহমেদ : বাংলাদেশ ও ভারত বর্তমানে সর্বকালের সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দেশের ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে এই অঞ্চলটিকে আরও সমৃদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে নয়াদিল্লির আইসিটি মৌর্য হোটেলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলানিউজ, দেশরূপান্তর, বাংলানিউজ
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে প্লাটফর্মটির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে এবং আমাদের জনগণের বৃহত্তর পারস্পরিক স্বার্থে উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য অনুরোধ করছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশ ও এই অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারবো।’
আইবিবিএফের প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারত সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক উপভোগ করছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আপনাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্ল্যাটফর্মটি রয়েছে এবং আমরা আপনাদের প্রচেষ্টা সহজ করার জন্য সকল ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’
কানেকটিভির সুযোগ নিয়ে চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল বাজার ধরতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা করতে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৌশলগত অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমে ভারত, উত্তরে চীন ও পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝখানে বাংলাদেশ চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল একটা বাজার।’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের, বিশেষ করে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা একই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চাই। ইন্ডিয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কলকারখানা স্থাপন করতে পারে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার (কানেকটিভিটি) সুবিধা নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে।
বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার। বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষায় আইন, উদার ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়, প্রস্থান করার সময়, লভ্যাংশ এবং মূলধনের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুযোগসহ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বহু সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। মোংলা, ভেড়ামারা ও মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ।’
‘আমরা সারাদেশে একশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে প্রায় ১২টি তৈরি হয়ে গেছে যেখানে চারটি অঞ্চল তিনটি দেশের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে’ যোগ করেন তিনি।
বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবৃদ্ধির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে বৈশ্বিক এফডিআই’র ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন। ’
এসময় সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যা সমন্বিত একটি প্রগতিশীল ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।’
অনুষ্ঠানে ভারতে শিল্প ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত এখন সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্ক উপভোগ করছে। এই সুসম্পর্কের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতের বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ভারতের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সভাপতি বিক্রম শ্রীকান্ত কিরলসকার, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি সন্দীপ সোমনি অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া (এএসএসওসিএইচএএম)-এর সভাপতি বালকৃষ্ণ গোয়েঙ্কা।
অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ভিডিও উপস্থাপনা পরিবেশিত হয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইও হতে পারে।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। এই সম্মেলন শেষে আজ দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে আলোচনা শেষে যুব ও ক্রীড়া, সংস্কৃতি, নৌপরিবহন, অর্থনীতি, সমুদ্র গবেষণা, পণ্যের মান নির্ধারণ, বাণিজ্য, শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা খাতের প্রায় ১৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে শনিবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠেয় দুই প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, আসামের নাগরিকত্ব তালিকা, সীমান্ত হত্যা প্রতিরোধ, উন্নয়ন-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী ইত্যাদি নিয়েও আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং ও অ্যান্টি সারকামভেনশন ডিউটি প্রত্যাহারের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়া বিএসটিআই অনুমোদিত পণ্য ভারতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের বিষয়ে উদ্যোগ ও উভয় দেশের স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো দিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন। সে কারণে উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়েও দুই প্রধানমন্ত্রী জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল দেশে ফিরবেন। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান