পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন প্রক্রিয়ায় ৩৩ শতাংশ বীমা কোম্পানি
মেরাজ মেভিজ : বীমা আইন অনুযায়ী লাইসেন্স প্রাপ্তির তিন বছরের মধ্যে প্রত্যেকটি বীমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইন অমান্য করে বছরের পর বছর, কোনো কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে দুই দশক, কাল ক্ষেপণ করে আসছে কোম্পানিগুলো। বিষয়টি নজরে এলে তিন মাসের (ডিসেম্বর, ২০১৯) মধ্যে সব বীমা কোম্পানিকে শেয়ার বাজারে আসার নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মাধ্যমে সে নির্দেশনা জারির পর শেষ তিন সপ্তাহের মধ্যেই পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্তি আবেদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৩৩ শতাংশ বীমা কোম্পানি।
খুব শিগগিরই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা জানিয়েছেন আইডিআরএ’র সদস্য (প্রশাসন অনুবিভাগ) গকুল চাঁদ দাস। এ প্রতিবেদকে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি কোম্পানি পুঁজি বাজারে আবেদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য এ মাসের মধ্যেই আমরা প্রকাশ করবো। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে দেয়া অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়েও জানানো হবে।
কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার সময় তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তারা সেখানে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ জন্য প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে ঐ ২৮ প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যদিও এই জরিমানার অর্থও বেশিরভাগ কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
২০১৩ সালের জুলাইয়ে নতুন ১৫টি বীমা কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয় আইডিআরএ। এছাড়া পুরনো রয়েছে আরও ১৩টি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে এই কোম্পানিগুলোই প্রধান ম্যাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বায়রা লাইফ শেষ ১৯ বছরেও পুঁজি বাজারে নাম লেখাতে পারেনি। এদিকে সবচেয়ে এগিয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স। লাইসেন্স প্রাপ্তিতে তাদের বয়স ২৩ পেরিয়ে গেলেও নাম ওঠেনি শেয়ার মার্কেটে। এছাড়া পুরনোদের তালিকায় আরও রয়েছে গোল্ডেন লাইফ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স এবং এক্সপ্রস ইন্স্যুরেন্স।
তবে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এখানে বেশ উন্নতি এসেছে বলে জানিয়েছেন ইন্স্যুরেন্স মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার পর যেসব বীমা কোম্পানির সক্ষমতা রয়েছে তারা এরই মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন করছে। আমার জানা মতে ৬-৭টি কোম্পানি ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। বাকি কয়েকটি বীমা কোম্পানিও নিজেরদের কাগজপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। আশা করি সক্ষম কোম্পানিগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই তাদের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। এরপর বাকিটা শেয়ার বাজারের ওপর নির্ভর করবে। তারা কাদের অনুমতি দিবে। এটা সময় সাপেক্ষ।
এই হিসাবে ৩৩ শতাংশ কোম্পানি আবেদন করলেও এ পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদনের শেষ সংখ্যাটা ৫০ শতাংশের বেশি না হবার সম্ভাবনাই দেখছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।
তাদের ভাষ্য, দেশে জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা মিলিয়ে ৭৫টি কোম্পানি রয়েছে। যার ৪৭টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও নাম লেখাতে পারেনি বাকি ২৮টি কোম্পানি। আর এ জন্য অর্থাৎ শেয়ারবাজারে আসতে কিছু বিধি নিষেধ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল প্রতিষ্ঠানকে পর পর তিন বছর লাভজনক হতে হবে। এখানেই ব্যর্থ বেশিরভাগ কোম্পানি। যারা টানা তিন বছর লাভে তো নেইই এমনকি নিজেদের আয় ভেঙে খাচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠানই রয়েছে ১২-১৩টি। নির্ধিারিত সময়ে তাদের পক্ষে পুঁজিবাজারে আসা প্রায় অসম্ভব। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান