অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, বললেন প্রধানমন্ত্রী
জিয়ারুল হক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবে। সকল উৎসব উদযাপন করতে পারবে। বাসস, বার্তা২৪
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর লালবাগের ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমীর দিনে তিনি মন্দিরের পূজাম-প ঘুরে দেখেন।
তিনি বলেন, ‘ আমরা এই স্লোগানটা নিয়ে এসেছি যে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। আজকে আমরা সবার উৎসবে যোগ দেই, অংশীদার হই। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী একটাই। সেখানে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্বের কথা বলা আছে। সহনশীলতা কথা শান্তির কথা বলা আছে। তারপরও আমরা মাঝে মাঝে দেখি অনেক ধরনের ঘটনা ঘটে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু প্রত্যেক মানুষের প্রতি যেন সহনশীলতা থাকে, সম্মান ও সহানুভূতি থাকে-এটাই একটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে। একটি দেশ উন্নত হতে পারে, সমৃদ্ধ হতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এ দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। যার শুভফলটা আজকে দেশের মানুষ পাচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একেবারে গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে রাজধানীর মানুষ পর্যন্ত তার সুফলটা ভোগ করতে শুরু করেছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করবেন যেন দেশের সকল মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে থাকতে পারে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের যেন মঙ্গল হয়, উন্নত জীবন হয়, দারিদ্র্যের হাত থেকে যেন মুক্তি পায়।’
এ সময় আরো বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।
ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের আগে প্রধানমন্ত্রী টিকাটুলীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মন্দিরের পূজাম-পও ঘুরে দেখেন। দর্শনার্থী, ভক্তদের মাঝে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এর আগে ভারতে চার দিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রাতে দেশে ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এর আগে সেখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি নয়াদিল্লীর বিমান বাহিনী স্টেশন পালাম ত্যাগ করে।
ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ও বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলীকে সঙ্গে নিয়ে বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।
এর আগে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সফরকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেন।
টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর প্রথম ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শনিবার নয়াদিল্লীর ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা একই দিনে রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
শনিবার সন্ধ্যায় তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নয়াদিল্লীতে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার ২০১৮’ গ্রহণ করেন। এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতার পক্ষ থেকে এ পুরস্কার নয়াদিল্লীর তাজমহল হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হানিসানাকে প্রদান করা হয়।
এর আগে শনিবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে শেখ হাসিনা একটি সরকারি মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন এবং হায়দরাবাদ হাউজের দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করেন।
চারদিনব্যাপী সফরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনা হোটেল তাজ প্যালেসের দরবার হলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে বাংলাদেশ বিষয়ক কান্ট্রি স্ট্রাটেজি ডায়ালগে যোগ দেন।
ঐদিন তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশনের মৈত্রী হলে তার সম্মানে একটি সংবর্ধনা এবং বাংলাদেশ হাউজে একটি নৈশভোজে যোগ দেন। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এ নৈশভোজের আয়োজন করে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ভারতের শীর্ষ স্থানীয় সিইওদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেন। এছাড়া তিনি ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (আইবিবিএফ) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সমাপনী অধিবেশনেও যোগ দেন।
সিঙ্গপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে ৩ অক্টোবর সকালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে যোগ দিতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শেখ হাসিনা এখানে আগমন করলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।