গুগল দেখে কাস্টমার কেয়ারে ফোন, বহু অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব লাখ লাখ টাকা
কায়কোবাদ মিলন : প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করে ক্লান্ত। বাড়তি ফেরার জন্য অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু করতে পারছেন না। ব্লক দেখাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে গুগলে সেই অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর খুঁজে ফোন করলেন। কাস্টমার কেয়ার নির্বাহীর কাছ থেকে জানতে পারলেন, কোনও সময় আপনি ক্যাব বুক করে ক্যানসেল করেছেন। ক্যানসেল করার জন্য নির্দিষ্ট টাকা জমা দিলেই ফের চালু হবে অ্যাপ। নির্বাহীর কথা মতো সেই টাকা দেয়ার পরই দেখা গেলো, আপনার অ্যাকাউন্টের সমস্ত টাকা কয়েক মিনিটের মধ্যে গায়েব! ঠিক এ ভাবেই সম্প্রতি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে ভারতের কলকাতা এবং শহরতলির বহু মানুষের। একের পর এক অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। আনন্দবাজার
কলকাতার নিউটাউনের বাসিন্দা মিশুক দাস এ ভাবেই খুইয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করার চেষ্টা করি। কিন্তু বুক করতে গিয়ে ব্লক দেখায়।’ এর পরই তিনি গুগল সার্চ করে সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর জোগাড় করেন এবং সেখানে ফোন করেন। তার দাবি, ‘ফোন করতে কাস্টমার কেয়ার এগজিকিউটিভ বলেন, এক আগে আমি বুকিং ক্যানসেল করেছিলাম। তার জন্য আমাকে ৫ টাকা দিতে হবে।’ এরপর তিনি ফোনে ওই এগজিকিউটিভের নির্দেশ মতো ‘এনি ডেস্ক’ নামে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন। এর পর নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্টার করে একটি এইপিআই (ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস) আইডিতে নিজের ডেবিট কার্ড নথিভুক্ত করেন। তখন তিনি তার কার্ড নম্বর এবং সিভিভি নম্বরও দেন। মিশুকের দাবি, এর পরই দু’মিনিটের মধ্যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা গায়েব হয়ে যায়।
একইভাবে ভুয়া অ্যাপ ক্যাব সংস্থার কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে প্রায় ২০ হাজার টাকা খুইয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কেষ্টপুরের বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা আচার্য। কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’
শুধু অ্যাপ ক্যাবের নম্বর নয়, গুগল সার্চে আমাজনের মতো অন্যান্য সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর পেয়ে, ফোন করে, একই রকম প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে।
বিধাননগর পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে যে কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন করা হয়েছিল, সেগুলো আদৌ ওই সংস্থার নম্বর নয়। ওগুলো সবই ভুয়া কাস্টমার কেয়ারের ফোন নম্বর। প্রতারকদের নম্বর।’ পুলিশের অনুমান, এই নয়া প্রতারণার পিছনে রয়েছে কোনও সংগঠিত চক্র। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ‘কোনও চক্র পরিকল্পনা মাফিক ভুয়া কাস্টমার কেয়ার নম্বরগুলো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে তালিকার উপরের দিকে রাখছে।’ এর ফলে কেউ গুগলে সার্চ করলে, ভুয়া নম্বরগুলোই আগে আসছে। সেখানে ফোন করে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোনও সংস্থার কাস্টমার কেয়ার নম্বর পেতে হলে সেই সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা উচিত। তার আগে ভালো করে দেখে নেয়া দরকার, ওয়েবসাইটটি আসল কি না। ঠিক একই ভাবে অজানা অ্যাপ ডাউনলোড করতেও বারণ করছেন সাইবার এক্সপার্টরা। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান