মতিনুজ্জামান মিটু : আগে হারিওয়ালারা (বর্গা কৃষক) যেতো গৃহস্থের দরজায়। এখন সময় বদলে গেছে, গৃহস্থরাই আসে হারিয়ওয়ালার বাড়িতে। এখন তারা যখন যা ইচ্ছা খায়। যখন তখন নিজের ঘেরের সবজি তুলতে এবং ধরতে পারে মাছ। অনেক সময় গৃহস্থরা অর্থাৎ জমির মালিকরাও তা পারে না। তাদেরকে সবকিছু বাজার থেকে কিনেই খেতে হয়। প্রায় এক নিঃশ^াসে সোনালী এই স্বপ্নের কথাগুলো তুলে ধরে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার বিত্তি ভুলবাড়িয়া গ্রামের বর্গা কৃষক আব্দুল মজিদ সরদার (৫৮) বললেন, অথচ এমনও দিন গেছে যখন এই এলকার মানুষ ক্ষিদের জ্বালায় জাউ খেয়ে থেকেছে। এভাবে গেছে আমার জীবনের ২০ থেকে ৩০ বছর। সে দিনগুলোতে এলাকার ৯০ ভাগ মেয়ে লোক প্রায় না খেয়ে থাকতো। অন্যদের প্রায় ৮০ ভাগেরই ছিলো এই দশা। অভিশাপ কেটে গেছে, লবণ পানির ঘেরের জমি আমাদের জন্য হয়ে উঠেছে আশীর্বাদ।
লবণের কারণে বছরের পর বছর এই এলাকার জমিতে বছরে একবার রোপা আমন ছাড়া আর কোনো ফসল হতো না। চারিধারের পাড়সহ ঘেরের জমিতে একই সঙ্গে ধান ও মাছ উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষ করে চিংড়ি ঘেরের চারপাশের জমিতে সারা বছর উচ্চমূল্যের লোভনীয় তরমুজ, করলা, ঝিঙ্গে, সীমসহ নানা জাতের সবজি।
আর এটি সম্ভব হয়েছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রযুক্তি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তাদের কর্মতৎপরতায়। ২০০৪ সালে মৃত্তিকা সম্মদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক কৃষিবিদ বিধান কুমার ভা-ার সর্বপ্রথম উপজেলার চাঁদগড়ে এমনই এক ঘেরের পাড়ের মাটিকে টপসয়েল পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে পেঁপে, কঁচু ও পুঁইশাক চাষ করে সফল হন। এতে এলাকার কৃষকদের মধ্যে জাগে আশার আলো।
এগিয়ে আসেন চাঁদগড়ের শিক্ষত তরুণ জয়ন্ত বিশ^াস, শুরু করেন ঘেরের পাড়ের পড়ে থাকা জমিতে সবজি চাষ। জয়ন্ত ঘেরের পাড়ের মাটি ও সার ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে এবছরই সর্ব প্রথম শুরু করেছেন উচ্চ মূল্যের ফসল তরমুজ। এছাড়া আগে থেকেই আবাদ করছিলেন করলা ও সীমসহ মাছ এবং ধান। ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ইতিমধ্যে তিনি তরমুজ ও করলা বেচে লাভ করেছেন দেড় লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যাপারিরা অনেক সময় ক্ষেতের পাশে এসেই এসব ফসল কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া একই গ্রামের কৃষক শেখ আব্দুল্লাহ উচ্চ মূল্যের সীম ও তরমুজ চাষের মাধ্যমে আয় করেছেন দেড় লাখ টাকা। শুধু এরাই নয় উপজেলার প্রায় সব গ্রাম জুড়ে শুরু হয়ে আশাজাগানিয়া এই চাষ।
এলাকার সফর কৃষক মোল্যা মো. সিরাজুল ইসলাম(৬৫) জানালে, এখানে এখন কৃষি শ্রমিককে দিতে হয় দিনে ৫০০ টাকা। কাজ শেষে বিকাল ৪টার পর থেকে সবাই দোকানে দোকানে চায়ের আসরে আনন্দের সময় কাটায়। কষ্টের দিন শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এখানকার ১৪০০ হেক্টর জমির মধ্যে ২৫০ হেক্টরে করলা, ১৫ হেক্টরে তরমুজ, ৩৫০ হেক্টরে শীম, ২৩০ হেক্টরে লাউ, ২২০ হেক্টরে বরবটি, ১৫০ হেক্টরে মিষ্টি কুমড়া আবাদ হয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান