প্রাকৃতিক গ্যাস নয়, আমদানিকৃত এলপিজি রপ্তানি করা হবে, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
ফাতেমা আহমেদ : আমদানি করা প্রাকৃতিক গ্যাস এলপিজি ভারতের ত্রিপুরায় রপ্তানির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বড় আকারে এই গ্যাস রপ্তানি করছি। এরপর ভ্যালু অ্যাড করে সেটি রপ্তানি করছি। আমাদের যে রপ্তানি আয় সেখানে নতুন আরেকটি খাত যোগ হলো। সারাবাংলা, বাংলা ট্রিবিউন, বার্তা ২৪, জাগোনিউজ, পূর্বপশ্চিম
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশেনে অংশগ্রহণ ও ভারত সফরের অভিজ্ঞতা দেশবাসিকে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সাড়ে ৩টায় এ সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী এই দুই সফরের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। সম্মেলনে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এ সময় এক সাংবাদিক জানতে চান, ভারতে গ্যাস দেয়ার চুক্তি হয়েছে। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এলপিজি গ্যাস আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় না। এখন এই গ্যাস আমরা আমদানি করছি। রান্নায় সিলিন্ডারে সরবরাহ করছি। আগে স্বল্প পরিমাণে আমাদের এলপিজি উৎপাদন হতো। আমদানিকৃত গ্যাস গ্রামে বিভিন্ন কোম্পানি সরবরাহ করছে। আগে ১০ কেজির সিলিন্ডার ১৬শ টাকা দাম পড়তো। বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ায় এখন ৯শ টাকা। এখন অনুমোদিত ২৬টি কোম্পানি কাজ করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ত্রিপুরায় যে গ্যাস দিচ্ছি সেটি এলপিজি। আমাদের দেশে যেমন সরবরাহ করছি সেটিই ত্রিপুরায় দিচ্ছি। যারা এর বিরোধিতায় সোচ্চার মানে বিএনপিকে ২০০১ সালের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। আমেরিকা গ্যাস বিক্রির জন্য বলেছিলো, আমি বলেছিলাম দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা তারপর বিক্রি করবো। যে কারণে ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আর যারা গ্যাস বিক্রি করে দিচ্ছি বলছে, তারাই গ্যাস দেবে বলে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিমি কার্টারের বাসায় আমরা বসেছিলাম। তাদের মাঝে চুক্তি হয়েছিলো। বিল ক্লিনটন এসেছিলেন। তিনিও আমাকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমাকে আমেরিকায় দাওয়াত নিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেও আমি একই কথা বলেছিলাম। আমি তখন বলেছিলাম বিএনপি গ্যাস দিতে পারবে না। কারণ আমাদের অত গ্যাস ছিলো না। সার্ভে করে দেখা গেছে, তারা সার্ভে করার জন্য লোক পাঠালো। বলল, বাংলাদেশ গ্যাসে ভাসছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালের কথা যারা মনে রেখেছেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরায় আমাদের একটা শক্ত ঘাঁটি ছিলো। সেখান থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করা হতো। ত্রিপুরা আমাদের শক্তি ছিলো। গ্যাস রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের রপ্তানিখাতে আরেকটি মাত্রা যোগ হলো।’
দেশের স্বার্থ বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে সেটি হতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিস্তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। তিস্তা ছাড়াও আরও সাতটি নদী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আসামের এনআরসি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ ভারতে সফরে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি ও এনআরসি নিয়ে কতোটা আশ্বস্ত, এমন প্রশ্নের জবাবে এ উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, ‘ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে আমি আসামের এনআরসি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত অসুবিধা হয়নি, আর হওয়ারও কথা নয়। তাহলে যেখানে অসুবিধাই হয়নি সেখানে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু দেখি না।’
রাজধানীসহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি হল সব জায়গায় সার্চ করে দেখা হবেÑকোথায় কী হয়, মারামারি-খুন হয়; কোনো দল-টল দেখা হবে না। নামমাত্র টাকা ভাড়া দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা ও আবাসিক হলে কারা থাকছেন, কারা মাস্তানি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো আমরা যাইনি, আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করতে আমরা চাই না। একটা ছাত্র মারা গেছে, তাদের (আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী) ক্ষোভ আছে, দুঃখ আছে; ঠিক আছে। কিন্তু পুলিশ আলামত সংগ্রহ করতে গেলে তারা বাধা দেয়, তিন ঘণ্টা সময় নষ্ট কেনো করলো? এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের আল্টিমেটামে ভিসি সেখানে গেলেন, তাকেও আটকালো। তারা (শিক্ষার্থীরা) হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলছেÑএক্ষুনি এটা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খুন হয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮০ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো, সূর্যসেন হলে সাতজনকে হত্যা করা হয়, চট্টগ্রামে ৮ জনকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলো, রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতেও হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে, সংগ্রামে ছাত্রদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নেই। বুয়েট চাইলে করতে পারে, আমরা কেনো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করবো। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে; তারা করতে পারে। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করবো না। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি ব্যান করে দিতে হবেÑ এটা তো মিলিটারি ডিক্টেটরদের কথা। এখানে রাজনীতিটা কোথায়? এর কারণটা কোথায়? এটা খুঁজে বের করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের জাতীয় সকল নেতৃত্ব উঠে এসেছে ছাত্র রাজনীতি থেকে। আমি ছাত্র রাজনীতি করেই এখানে এসেছি। এজন্য আমরা দেশের জন্য কাজ করতে পারি।
বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যা প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুয়েটের খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে আলামত সংগ্রহের নির্দেশ দেই। যখন পুলিশ আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে, তখন তাদের আটকে দেয়া হলো। তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হলো, কেন? সেটা জানা দরকার। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলো কিনা। পরে আইজিপি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছি কোন রুমে কারা ছিলো সবগুলোকে ধরে অ্যারেস্ট করুন। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে আমি মেনে নেবো না। ছাত্রলীগকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকেছি, ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি ।
তিনি বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। কারো দাবির অপেক্ষায় তো আমি বসে থাকিনি। সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। এরপর আন্দোলনই বা কীসের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, যে বাবা-মা সন্তান হারিয়েছে তাদের কষ্টটা কী সেটা আমি জানি। তাকে (আবরার ফাহাদ) এভাবে ধরে নৃশংসভাবে মারা, এটা কেন। যত রকম শাস্তি আছে সব দেয়া হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা অপরাধ করেছে তারা শাস্তি পাবে। কারণ, অপরাধী অপরাধীই, এখানে কে ছাত্রলীগ কে আওয়ামী লীগ এসব বিবেচনা আমি করিনা। বুধবার গণভবনে আবরার হত্যা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুয়েটের ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ছাত্রলীগকে বলেছি যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পুলিশকে বলেছি গ্রেপ্তার করতে, নির্দেশ দিয়েছিলাম আলামত সংগ্রহ করতে, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে। এখানে কোনো ছাড় নেই। কেউ যদি কোন অপরাধ করে সে কোন দল আমি দেখিনা। কে ছাত্রলীগ, কে ছাত্রদল সেগুলো আমরা বিচার করিনা। অপরাধীদের যত রকমের কঠিন শাস্তি দরকার দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ২১ বছরের ছেলে। তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কী দুঃখজনক। তার বাইরে কোন ইনজুরি নেই, সব ইনজুরি ভেতরে।
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ সব সময় একটা স্বাধীন স্বতন্ত্র সংগঠন। তবে যেহেতু তারা ছাত্রলীগ তাই তাদের গাইড লাইন দিতে হয়। এই ছাত্রলীগ কিন্তু দেশে ইতিবাচক অনেক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান