ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলি পরিষেবা সংস্থার মুমূর্ষু অবস্থা
রেজাউল আহসান : ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড এবং মহানগর টেলিফোন নিগম বন্ধ করে দিতে চাইছে ভারত সরকার। কয়েক বছর ধরে ধুঁকছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুটি। উৎসবের মওশুমেও বেতন পাচ্ছেন না এই দুই সংস্থার মোট এক লাখ ৯৮ হাজার কর্মী। ডয়চে ভেলে
সরকারি টেলি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা দুটির লাইনম্যান থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এমনকি ভেন্ডররাও আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ভয় চাকরি হারানোর, সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার। জনগণের সংস্থা পুনর্গঠনে কোনও আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। ফোর-জি স্পেকট্রাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকী, সংস্থার হাতে সরকারেরই দেয়া ‘লেটার অব কমফোর্ট’ থাকা সত্তে¡ও ঋণ দিচ্ছে না কোনও ব্যাংক। সবমিলিয়ে বঞ্চনা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছেন সংস্থার কর্মীরা।
এদিকে, এই দুই সংস্থাকে আর্থিক সাহায্য দিতেও রাজি নয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়। বরং ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) এবং মহানগর টেলিফোন নিগম (এমটিএনএল) বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। বেসরকারি টেলিকম সংস্থার রমরমা এবং সরকারের প্রবল উদাসিনতার জেরে ক্রমশ বাজার হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। আয় এবং ব্যয়ের ব্যবধান বেড়েছে ক্রমশ। সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক সাহায্য এখনই প্রয়োজন তা না পেলে এমনিতেই মুখ থুবড়ে পড়বে ভারতের একমাত্র সরকারি টেলি পরিষেবা সংস্থা। সরকারের টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছিলো, বিএসএনএলের পুনরুদ্ধারে এখনই অন্তত ৭৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাব আপাতত ফিরিয়ে দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।
এক সাক্ষাৎকারে সঞ্চার নিগম এক্সিকিউটিভ্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সর্বভারতীয় সহকারি সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাহা জানালেন, ‘বহু দশক ধরে সারা দেশে ল্যান্ডলাইন টেলিফোন পরিষেবা দিয়ে আসছে বিএসএনএল। দুই দশক আগে মোবাইল পরিষেবা দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শুরুর দিকে সংস্থার সাড়ে ছয় লাখ কর্মী ছিলো তখনও লাভের মুখ দেখেছে সংস্থাটি। সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে আজ বিএসএনএলের মতো সরকারি সংস্থা লোকসানে চলছে। বেসরকারি সংস্থাকে পৃষ্ঠপোষকতার নীতিই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে ডুবিয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলি যেখানে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রেখেছে। অথচ বিএসএনএলের ঋণের পরিমাণ মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আর্থিক সঙ্কট থেকে বের করে আনা মোটেই অসম্ভব নয়। কিন্তু, কোনো অজানা কারণে সরকারের সেই সদিচ্ছা নেই। তিনি জানিয়েছেন, টেলিকম সংস্থার সমস্ত কাজ প্রায় বন্ধ। নতুন সংযোগ থেকে রক্ষণাবেক্ষণ, টাকার অভাবে সবই থমকে রয়েছে।
সারা ভারতে বিএসএনএল কর্মীর সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার। এমটিএনএলের কর্মী সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। মাসিক বেতন বাবদ বিএসএনএলের ব্যয় হয় ৭৫০-৮৫০ কোটি রুপি। এমটিএনএলের বেতন বাবদ ব্যয় ১৬০ কোটি। বিএসএনএল কর্মীদের ফেব্রæয়ারির বেতন হয়েছিলো মার্চের শেষে। গত আগস্টের বেতন পেয়েছেন ১৮ দিন পর। জুলাইয়ের বেতন পেয়েছেন ৫ আগস্ট। এ ব্যাপারে মোদী সরকারের বক্তব্য, সরকারি কোষাগারে টাকা নেই। আবার অত্যধিক কর্মী বড় সমস্যা। সেই জন্য স্বেচ্ছা অবসরের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এসডিই(আইপি) সলিল পোদ্দার জানিয়েছেন, ‘এতো বছর নিয়মিত বেতন ও ভাতা পেয়ে এসেছেন বিএসএনএল কর্মীরা। একটা ধরাবাহিকতা ছিলো। কিন্তু, গত কয়েক মাস ধরে বিএসএনএল কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্য টাকা আটকে রয়েছে। পরিষেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে সামগ্রিক ভাবে কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এখন সরকার যদি এগিয়ে এসে সমাধান না করে, তাহলে বিএসএনএল কর্মী ও তাদের পরিবার শুধু নয়, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন পরিষেবা ধ্বংস হবে। অসুবিধায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। সরকারি দপ্তর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হয় বন্ধ করে, নতুবা ব্যক্তিগত মালিকানার হাতে তুলে দিয়ে কার্যত দেশকে বিক্রি করে দেয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে। তবে, সরকারের উদাসিনতা ও ভ্রান্ত নীতি শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের সমস্যার কারণ হবে, এমনটাই মনে করছেন কর্মকর্তাদের একাংশ। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব