মামুন খান : কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি ওবায়দুল হককে মৃত্যুদÐাদেশ এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় কারাগার থেকে ওবায়দুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষনার পর পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরআগে রায় ঘোষণা উপলক্ষ্যে রিশার মা তানিয়া হোসেন, বাবা রমজান হোসেন, ছোট ভাই ও বোন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা আদালতে উপস্থিত হন। বেলা ২টা ৫১ মিনিটে ওবায়দুলকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ৩ টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। ৩ টা ২৬ মিনিটে আদালত ওবায়দুলের মৃত্যুদÐের রায় ঘোষণা করেন। পরে তাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায় ঘোষনার সময়ে বিচারক বলেন, সুরাইয়া আক্তার রিশা একটা স্বনামধন্য স্কুলের ছাত্রী। ভালোবাসার অধিকার সবার আছে। তবে সেই ভালবাসা যেন কখনোই সহিংসতায় রূপ না নেয়। রিশার মত আর কোন মেয়েকে যেন জীবন দিতে না হয়। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আসামিকে এই মুহূর্তে এ ধরণের অপরাধ সংঘটনের সাহস না করে এজন্য পেনাল কোডের ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার যোগ্য। আসামিকে মৃত্যুদÐ দেয়া হলো।
মেয়ের খুনী ওবায়দুলের ফাঁসির আদেশ শুনে আদালতেই কেঁদে ফেলেন রিশার মা তানিয়া হোসেন। তিনি বলেন, তিনটা বছর আদালতে দৌড়াদৌড়ি করছি। এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। হাইকোর্টে যেন এ আদেশ বহাল থাকে। ওর ফাঁসি যেন দ্রæত কার্যকর হয়। সন্তান হারানো যে কি কষ্টের যার যায় সেই বুঝে। এভাবে আর যেন কোন মায়ের কোল খালি না হয়।
রিশার বাবা রমজান হোসেন বলেন, রায়ে আমরা সবাই সন্তুষ্ট। এ রায় যেন দ্রæত কার্যকর হয় এই আমাদের চাওয়া।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
স্কুলের প্রিন্সিপাল আবুল হোসেন বলেন, আমরা ভালো রায় পেয়েছি। তবে এ রায় যেন দ্রæত কার্যকর হয় সেই আশা করছি।
রিশার সহপাঠীরা বলেন, অপরাধ করে কেউ পার পায় না। আদালতের রায়ে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আমরা এ রায় দ্রæত কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ ৬ অক্টোবর ধার্য করেন। কিন্তু ওই দিন ওবায়দুলকে আদালতে হাজির না করা তা পিছিয়ে বৃহস্পতিবার ধার্য করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে ফুট ওভারব্রিজে রক্তাক্ত অবস্থায় রিশাকে পাওয়া যায়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর ২৮ আগস্ট সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিশার মৃত্যু হয়। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব