অর্থের গোলমেলে হিসাবে মিটছেই না চামড়া মালিক-আড়তদার দ্বন্দ্ব
মেরাজ মেভিজ : কোরবানী ঈদের পর দুই মাস এবং সরকারের নির্দেশে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের দেড়মাস পার হলেও আদৌ মেটেনি ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা আড়তদারদের সেই তিন দশক আগের অর্থের দ্বন্দ্ব। এমনকি এতোদিনেও সমঝোতা স্মারকের বিধিগুলোই ঠিক করতে পারেনি দুই পক্ষ।
অথচ ব্যবসায়ীদের সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে বৈঠকের পর পরই ট্যানারি মালিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা অর্থ তিন কিস্তিতে ফিরিয়ে দেবার কথা জানিয়েছিলেন।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে পুরনো দ্বন্দ্ব আরও তেতে ওঠা বা ঈদ পরবর্তী সময়ের চেয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আরও বাজে অবস্থা বিরাজের বিষয়টি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বৈঠকের পরপরই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কিছু পাওনা আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে পাঠিয়েছিলো ট্যানারি মালিকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যান্ড গুডস অ্যাসোসিয়েশন। স্বল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিশোধের সেই চেক থেকেই দুটি প্রতিষ্ঠানের পুরো অর্থ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন আড়তদাররা।
শুধু তাই নয় সমঝোতা স্মারকের যে খসড়া তৈরির ভার দুই পক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিলো এফবিসিসিআই সেখানে আসেনি কোনো সমাধান। ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে স্মারকের যে খসড়া পাঠানো হয়েছিলো সেখানে রাখা হয়নি তাদের অর্থ পরিশোধের সেই মূল ইস্যু, তিন কিস্তির (১৯৯০-১০, ২০১০-১৫, ২০১৫-১৯) বিষয়টিই।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজি দেলোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ভেবেছিলাম দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আমাদের পাওনাগুলো মিটিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তারা যে ৫-৬টি প্রতিষ্ঠানের কিছু পাওনা পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে ২টির পাওনা হিসাবের চেয়ে পরিশোধের অংক এতোই কম ছিলো যে আমরা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের কাছে যে ড্রাফট (সামঝোতা স্মারকের খসড়া) পাঠানো হয়েছে তা দেখে আমরা বিস্মিত। সেখানে পাওনা পরিশোধের তিন কিস্তির বিষয়টি তারা রাখেইনি। আবার এর সঙ্গে তারা বলছেন এ চুক্তির মেয়াদ থাকবে মাত্র এক বছর। আমরা এগুলো ঠিক করে পাঠিয়েছি কিন্তু এখনও ঐকমত্য হতে পারিনি। পুরনো টাকা চাইলে ব্যবসা কমে গেছে বলে এখন তারা কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) দোহাই দিচ্ছেন। আক্ষরিতক অর্থেই ঈদ পরবর্তী সময়ের চেয়েও এখন অবস্থা আরও বাজে।
এত কষ্ট করে যে সমঝোতার স্মারক তৈরি হচ্ছে তার মেয়াদ কেন এক বছর করতে চাইছেন ট্যানারি মালিকরা? বা টাকার চেক কেন ফেরত পাঠানো হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা স্মারকের একটি খসড়া তাদের পাঠিয়েছি। এখন তারা তাদের অংশ যোগ করবেন। এটা তৈরি হতে সময় লাগবে। অন্তত আরও দুই-তিন সপ্তাহ। আর আগের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়টি আমরা আপাতত বন্ধ রেখেছি। চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই এটা আবার শুরু হবে। আসলে এটিতো আমাদের দীর্ঘ সম্পর্কের বিষয়, আশা করছি চুক্তির সময় নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। আর তারাও জানেন, সিইটিপি সমস্যার কারণে আমাদের ব্যবসা কতোটা কমে গেছে।
প্রসঙ্গত, ট্যানারি মালিকদের দাবি লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ ও সিইটিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান সম্প্রতি জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন হবে সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারসহ (সিইটিপি) অন্যান্য সকল কাজ। এ শিল্পনগরীর সকল কাজ শেষ করার পর লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ অর্জনের লক্ষ্যে নিরীক্ষার আমন্ত্রণ জানানো হবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান