যুক্তরাজ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি, বাজার বাড়ছে জার্মানিতে
মেরাজ মেভিজ : দেশ ভিত্তিক আয়ে জমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন, ২০১৯) বিশাল আয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে ফেলে শীর্ষে উঠে আসে জার্মানি। তবে সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যে, ত্রৈমাসিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১.৪ শতাংশ রপ্তানি কম হলেও ফের সেরা তালিকাদের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে সবশেষ প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৯) গত অর্থ বছরের এ সময়ের তুলনায় যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়েছে ৪.৮২ শতাংশ।
এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হিসাবে কমেই চলেছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়। গত অর্থ বছরের এই সময়ের তুলনায় দেশ ভিত্তিক হিসাবে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমেছে ৩.১৩ শতাংশ। এমনকি অর্জিত হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের শীর্ষ দেশে ত্রৈমাসিক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রাও।
তবে এখনই পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনাময় দেশগুলো নিয়ে ভাবনারই পরামর্শ দিচ্ছেন এ খাতের বিশ্লেষকরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা ইয়াসমিন এ প্রতিবেদককে বলেন, রপ্তানি নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জার্মানিতে শেষ প্রান্তিকে আয় বাড়লেও এ প্রান্তিকে আবার যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আসলে জার্মানি যেহেতু কেন্দ্র, সেখান থেকেই অনান্য দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি হয় সে জন্য বেড়েছে। তবে আমাদের সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমাদের সবশেষ পরিসংখ্যানে কিন্তু যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়েছে। আর শীর্ষে ফিরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এনবিআর ও ইপিবি’র বাৎসরিক পরিসংখ্যার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শেষ কয়েক বছর ধরেই বৈদেশিক রপ্তানি আয়ে শীর্ষ তিন দেশের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এপ্রিল-জুনের হিসাবে দেখা যায়, বাৎসরিক পরিসংখ্যানে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে যখন ৯ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল তখন এ সময়ে জার্মানিতে রপ্তানি হয়েছে ১০ হাজার ১০ কোটি টাকা। আর বরাবরই তিনে থাকা যুক্তরাজ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ৬ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।
আর জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে যথাক্রমে ১৬৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার (প্রায় ১৪ হাজার ২৮ টাকা), ১৫৭ কোটি ২ লাখ ডলার (প্রায় ১৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা) ও ১১১ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা)।
সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের ভাষ্য, দেশ ভিত্তিক পণ্য রপ্তানিতে আমরা জোড় দিচ্ছি। সম্ভাবনাময় পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য সহজীকরণ ছাড়াও রপ্তানিকারকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। যেসব দেশে শুল্ক বেশি সেসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি এমন কয়েকটি দেশ সফর করেছেন মন্ত্রী ও সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ইপিবি’র বাৎসরিক পরিসংখ্যান বলছে, গত জুলাই থেকে চলতি জুন পর্যন্ত সার্বিক রপ্তানিতে শীর্ষেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৮৭ কোটি ৬২ লাখ ৯১ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার হিসাবে ৫৭ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে যা ছিল ৫৯৮ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৫ ডলার।
বলাবাহুল্য, গত বছরের তুলনায় সার্বিক রপ্তানিতে আয় বেড়েছে জার্নানি থেকেও। ২৮ কোটি ২৪ লাখ ৪১ হাজার ৩৮৩ ডলার বেড়ে এ বছর রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬১৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ৭০১ ডলার বা ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা। এদিকে বাংলাদেশ আরও বলছে, জার্মানি এখন বাংলাদেশের ১৮তম রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ। গত অর্থবছরে ৬ কোটি ৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন জার্মানিতে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৫১ কোটি ৫১০ লাখ টাকা।
জার্মানি ছাড়াও সম্প্রতি নতুন আরও বেশ কয়েকটি বাড়ছে দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, মন্ত্রণালয় ও সংশিষ্ট বিভাগগুলোর ভাবনা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে তৈরী হচ্ছে পণ্যের দেশভিত্তিক পরিকল্পনা। বিশেষ করে কাতার ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর বাণিজ্য জোট (মারকোসার) নিয়ে বর্তমান সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়।