অস্তিত্ব সংকটে স্থানীয় ফসল ও ফসলের জাত
মতিনুজ্জামান মিটু : কৌলিসম্পদ একটি দেশের ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। তেল, গ্যাস বা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মতো জার্মপ্লাজমকেও (মাতৃগাছ) দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কৃষকের হাতে উদ্ভব হলেও জার্মপ্লাজমের সুবিধা ভোগ করে বহুজাতিক বীজ উৎপাদন কোম্পানি। এই জার্মপ্লাজমের মালিকানা ও বাণিজ্যিক সুবিধা যাতে উন্নত দেশের বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য জন্য দক্ষ জনবল তৈরীর মাধ্যমে কৌলিসম্পদ গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করা দরকার। কৃষি শিক্ষায় কৌলিসম্পদ এর ওপর কোর্স অন্তর্ভূক্ত ও কোর্স কন্টেন্ট আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি। অপরিহার্য্য না হলে প্রমোশন বা অন্য কোনো কারণে কৌলিস্পদ বিষয়ে দক্ষ বিজ্ঞানী অন্য কোনো ডিসিপ্লিন এ স্থানান্তর করা যাবে না। খাদ্য নিরাপত্তা ও আমাদের উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারী) উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. নাজিরুল ইসলাম এসব কথা জানান।
খাদ্য নিরাপত্তা, আমাদের উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ ও কৃষি পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ^ায়নের যুগে মুক্ত বাজার অর্থনীতি, উচ্চ ফলনশীল আধুনিক জাতের সম্প্রসারণ ও মানুষের খাদ্যভ্যাস পরবির্তনসহ নানবিধ কারণে স্থানীয় ফসল ও ফসলের জাত আজ অস্তিত্ব সংকটে।
তিনি আরও বলেন, শিল্প-বাণিজ্যের প্রসার ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে কৃষিজমি ও কৃষিশ্রমিকের সংকট সৃষ্টি করবে প্রকটভাবে। বাস্তবতার নিরিখে স্বল্প সময়ে খাদ্য সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে দরকার কৃষিজমির পরিমাণ বৃদ্ধি, পরিবেশ বান্ধব কৃষি ব্যবস্থা ও শস্য বহুমুখীকরণ। কতিপয় দানাজাতীয় খাদ্যশস্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে অপ্রচলিত বা স্বল্প প্রচলিত উদ্ভিদ প্রজাতি হতে প্রাপ্ত খাদ্য গ্রহণেও অভ্যস্ত হতে হবে। নগণ্য হলেও সব উদ্ভিদ প্রজাতি খাদ্য হিসেবে পুষ্টিকর, কম খরচে স্বল্প উপকরণে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপকরণ ছাড়াই চাষ করা যায়। রোগবালাই প্রতিরোধী হওয়ায় এসব অপ্রচলিত ফসল চাষ করতে কীটনাশক বা বালাই নাশকের দরকার হয়না। এতে পরিবেশের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না। শর্করা প্রধান দানাশস্য ধান, গম, ভুট্রা এবং আলু একক ভাবে খাদ্য হিসেবে মানুষের শরীরের সার্বিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তাই অপ্রচলিত এসব উদ্ভিদজাত খাদ্য দানাশস্যের পুষ্টির পরিপূরক মনে করা হয়।
পৃথিবীতে খাদ্যোপযোগী ৩০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেলেও মাত্র ৭ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে ১৫০ ধরণের উদ্ভিদ বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয়। খাদ্য তালিকার ১০৩ প্রকারের উদ্ভিদের মধ্যে ধান, গম, ভুট্টা ও আলু পৃথিবীর অর্ধেক বা তারও বেশী মানুষের প্রধান খাদ্য। এ সব খাদ্যশস্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং নুন্যতম প্রস্তÍÍÍত প্রক্রিয়া গুণ সম্পন্ন। যা খাদ্যশস্য অপ্রতুল হলে ভবিষ্যতে পারিবারিক খাদ্য মজুত তৈরীর মাধ্যমে খাদ্য নিরিাপত্তা নিশ্চিৎ করতে স্বচেষ্ট হবে। তাই খাদ্য ক্রয় করার ক্ষমতা অর্জনের জন্য মানুষ অর্থ উপার্জনে বেশি সময় ব্যয় করবে এবং খাদ্য হিসেবে গুরুত্ত্ব পাবে দানাশস্য। ফলে অপ্রচলিত ও জনপ্রিয় অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি অস্তিত্য সংকটে পড়বে। তাই আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এ সকল উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ রক্ষা করার বিকল্প নেই। উদ্ভিদ কৌলিসম্পদ প্রত্যেক দেশেরই প্রাকৃতি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য বিজড়িত অমূল্য সম্পদ যা দিনে দিনে প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব