রেলকে বন্ধ নয়, লাভজনক করার চেষ্টা করছি, বললেন প্রধানমন্ত্রী
জিয়ারুল হক : উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত আন্তঃনগর ট্রেন ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে’র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ ও ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনের রেক নতুন কোচ দ্বারা প্রতিস্থাপনেরও উদ্বোধন করেন তিনি। বাংলানিউজ, বিডিনিউজ
বুধবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন এ ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নেড়ে ও বাঁশিতে হুঁইসেল দিয়ে নতুন ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি কুড়িগ্রামবাসীর জন্য সরকারের উপহার। একসময় তারা ট্রেন বন্ধের ব্যবস্থা করেছিলো। আমরা সেটাকে কিভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায় সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার থেকে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনের বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু হবে। নতুন এ আন্তঃনগর ট্রেন উদ্বোধনের খবরে জেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার ট্রেনটির সাপ্তাহিক ছুটি। এদিন ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ট্রেনটির। আর ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে। যা সকাল ৬টা ২০ মিনিটে কুড়িগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে।
১৪টি বগি নিয়ে যাতায়াতের সময় ট্রেনটি রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-জয়পুরহাট-সান্তাহার-নাটোর-মাধনগর-টাঙ্গাইল-মৌচাক-বিমানবন্দরে যাত্রী ওঠা-নামা করবে।
‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা-কুড়িগ্রামের ২৮৬ দশমিক ৮ মাইল বা ৪৬১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রায় মোট ৬৫৭টি আসন সুবিধা এবং ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম যাত্রায় ৬৩৮টি আসন সুবিধা থাকবে।
শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা, এসি সিট ১ হাজার ১৬৮ টাকা এবং এসি বাথ ১ হাজার ৮০৪ টাকা আসন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রাম, রংপুর রেল স্টেশনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উপকারভোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কুড়িগ্রাম প্রান্ত থেকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ’কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ এবং রেল সেক্টরের উন্নয়ন নিয়ে তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন।অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
এদিকে স্কুলের শিশুদের ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতন করার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে যানবাহনের চালক ও চলাচলকারী উভয়কেই দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।’
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা সবসময় বলে আসছি যে, স্কুল থেকেই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে সচেতন করতে হবে। আমি মনে করি যে প্রতিটি স্কুল থেকেই এই শিক্ষাটা দেওয়া একান্ত দরকার।’
রাস্তায় চলাচলকারী ও যানবাহন চালকদের সচেতন ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যখন যান চলাচল করবে, যারা গাড়ি (বাস, ট্রাক) চালাবেন বা মটরসাইকেল চালাবেন তাদেরকেও সচেতন হতে হবে। সচেতন হতে হবে এই কারণে যে, অহেতুক একটা প্রতিযোগিতা করতে যেয়ে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা হয়।
‘আমরা নিরাপদ সড়ক আইন প্রণয়ন করেছি কিন্তু যারা চলাচল করেন তারা কিন্তু মোটেও সচেতন না। তাদেরকেও সচেতন হতে হবে। কারণ যারা রাস্তায় চলাচল করবেন, আপনি রাস্তা যখন পারাপার হবেন এই পারাপারের সময় আপনাকেতো ডাইনে বামে সবদিকে দেখেই পার হতে হবে।’
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাকবলিত চালকের পাশাপাশি ভুক্তভোগী পথচারীর কোনো ভুল আছে কি না তা বিবেচনায় নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘একটা দুর্ঘটনার শিকার কেউ হলে তার পরিবার ভীষণভাবে কষ্টের শিকার হন এবং বিভিন্নভাবে তাদের জীবনমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দিকটা সকলকেই দেখতে হবে। এই ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ময়মনসিংহ- গফরগাঁও টোক সড়কে বানার নদীর উপর সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ইন্দ্রপুল হতে চক্রশালা পর্যন্ত বাঁক সরলীকরণ, সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ৪ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার, মুন্সিগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ ১৩টি সেতু স্থায়ী কংক্রিট সেতু দ্বারা প্রতিস্থাপনের উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে টানা সরকারে থাকার কারণেই উন্নয়নের কাজগুলি গতিশীলতা পেয়েছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নত হচ্ছে।
দারিদ্র্যের হার কমানো ও শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অবকামাঠামো ও সেবা খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা মানুষের সেবা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানী থেকে জেলা, উপজেলা, গ্রাম পর্যন্ত একটা সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
মূখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনপ্রান্ত থেকে অন্যদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।
এর আগে প্রকল্পগুলোর ওপর ডিজিটাল প্রদর্শনী উপস্থাপন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।