ছেঁউড়িয়ায় সাঙ্গ হলো সাঁইজি মেলা
আব্দুম মুনিব : ১২৯তম তিরোধাম উপলক্ষে বাউল সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ীতে শুরু হওয়া সাধুসঙ্গ শেষ হয়েছে। সাঁইজির পুন্যধাম কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে পূণ্যসেবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সাধুসঙ্গ। তবে সাধুসঙ্গ শেষ হলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় কালীনদীর পাড়ে লালন মঞ্চে লালনের জীবনকর্ম নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপনী হয়।
এদিকে সাধুসঙ্গ শেষ হওয়ায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খেলাফতধারী সাধুরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
‘মিছে মায়ায় মজিল মন কি কর রে’ এমন প্রাণ দিয়ে গাওয়া সংগীতের আসর লালন মাজার জুড়ে। বুধবার সকালে গুরুকার্য এবং বিকালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাধুসঙ্গের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় রাখাল সেবা আর মধ্যরাতে অধিবাস সেবা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাদা ভাত, মশলাবিহীন তরকারি আর শুধু ভাজা ইলিশ মাছ দিয়ে নিয়েছেন পূর্ণসেবা আঁখড়াবাড়ীতে আসা বাউল ভক্ত-অনুসারীরা। শুক্রবার সকালে মিষ্টি পায়েশ দিয়ে বাল্যসেবার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সাধু সঙ্গ।
আধ্যাত্ববাদের মহাপুরুষ ফকির লালন সাঁইজীর আধ্যাত্ববাদ ও মানবতাবাদেও গুনবর্ণনার শেষ নেই। তবে যতোটা আনন্দ নিয়ে সাঁইজি ধামে আসে সকল অনুসারীরা তার চাইতে বেশি কষ্ট বেদনা নিয়ে তারা আবার ফিয়ে যায় আপন নিড়ে। কষ্ট নিয়ে ফিরে গেলেও সাধু গুরুরা মনে করেন, সাঁইজি কখনো মরে না, তারা যতো দূরেই যাক না কেন সাইজীর ধাম তাদের দেহ ঘরের মধ্যেই আছে, তাই সাঁইজির জন্য তাদের দুঃখের কিছু নেই, সাঁইজি আছে সকলের ধ্যানের মধ্যে।
মেলায় আসা সকলের পরনে সফেদ লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া আর মাথায় গেরুয়া পাগড়ী সংসার ত্যাগী মানুষগুলোর মনের খবরও বলে দিচ্ছে। এরা জাতে বিশ্বাসী নয়। সাদায় জাত চেনা যায় না। সাদায় রং থাকে না, হিংসা থাকে না। সাদাতেই কালো দূর হয়। তাই অহিংস সমাজ প্রতিষ্ঠায় লালনের দর্শন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান