এক দশকে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা সরকারের
শাহীন চৌধুরী : আগামী এক দশকে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করার ব্যাপারে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তিন দেশ। ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির ব্যাপারে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সচিব পর্যায়ে বৈঠকের চার মাসের মাথায় তিন দেশ এখন চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে নেপাল-ভারত সহযোগিতা বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির সপ্তম বৈঠকে তিন মাসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নেপালী বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব দীনেশ ঘিমেরি বলেন, ওই বৈঠকে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহারের মডালিটি ও বাণিজ্যিক শর্তাবলী ঠিক করা হবে, যাতে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি করা যায়।
গত জুনে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে শিলিগুড়ি করিডোরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া নেপাল ও ভারত দ্বিতীয় একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০০ কেভি বুতওয়াল-গোরাকপুর ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনে রাজি হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি বাংলাদেশে বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশটি নেপালের জন্য লোভনীয় বিদ্যুৎ রপ্তানি বাজারে পরিণত হয়েছে। মূলত এই চাহিদা মেটাতেই বাংলাদেশ আগামী এক দশকে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত ২০টি বড় ধরনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
নেপালের ৯০০ মেগাওয়াট আপার কার্নেলি প্রকল্প থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে ২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ বিয়াপ্পার নিগমের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে তা থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য শিগগিরই এ দেশগুলোর সাথে সমঝোতা স্মারক সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে এ কথা জানিয়েছেন। ভারতের ভেতর দিয়ে এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশে আসবে এবং এ জন্য ভারতের সম্মতিও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরইÑসম্ভবত আগামী মাসেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জন্য আমি নেপালে যাবো। নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, নেপাল ও ভুটানের মতো দেশগুলোতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করে ৮০ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রপ্তানি করা সম্ভব। বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই এ থেকে উপকৃত হতে পারে।
এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে ভারতের ভূখ-ের ভেতর দিয়ে একটি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে। বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে। এ জন্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে ইতিমধ্যেই ভারতের সম্মতি পাওয়া গেছে, তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি হবে সমঝোতা স্মারক সই হবার পর। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান