ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে বোরহানউদ্দিন রণক্ষেত্র, নিহত ৫ ও আহত দেড় শতাধিক
মশিউর রহমান ও হারুন উর রশীদ : ফেসবুকে মহানবী (স.)-কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামে যে তরুণের ফেসবুক পোস্ট থেকে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
ওই আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে গতকাল রোববার বেলা ১০টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহীদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। তবে বিক্ষোভ মিছিলটি না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ জানায়। সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলেন। তাদের অনুরোধে দুই ইমাম সকাল ১০টার দিকেই যে সকল লোক আসছে তাদেরকে নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি সমাপ্ত করেন। কিন্তু ততক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং সেখানে থাকা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ওই মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য উত্তেজিত মুসল্লীদের উপর ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। এতে সেখানে থাকা মুসল্লীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের উপর আক্রমণ চালায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সাথে মুসল্লীদের সংঘর্ষ হয়। এতে ৫জন নিহত হয়েছে। ১০ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লী আহত হয়। এদের মধ্যে অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকীদের বোরহানউদ্দিন ও ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক জন মাদ্রাসা ছাত্র ও কলেজের ছাত্র রয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে বোরহানউদ্দিনে বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্ট গার্ড ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের ওই যুবকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। আমরা হ্যাকের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আটক করেছি। আমরা এ নিয়ে শনিবার রাতে স্থানীয় আলেমদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে আজকের(রোববার) প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লীদের সাথে কথা বলেছি। এবং আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে। যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি তখন একদল উত্তেজিত জনতা আমাদের উপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নেই। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙ্গে ফেলছে তখন আমরা প্রথমে সর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ি। পরবর্তীতে এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালায়। এতে আমার জানা মতে একজন পুলিশ সদস্যের বুকে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়। আমরা আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি তাদের মধ্যে তিন জন নিহত হয়েছে। তবে বাকী আরও থাকতে পারে সেটা আমাদের কাছে তথ্য নেই।
নিহতরা হলেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসা পড়–য়া ছেলে মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়–য়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মহিউদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে মাহফুজ (৩০), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার মোঃ হারুনের ছেলে মোঃ মিজান (২৮), দেউলা ইউনিয়নের হারুনের ছেলে তানবির (৪৫)। সম্পাদনা : ইকবাল খান