শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল হলে বছরে ১২ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা প্রদান সম্ভব হবে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
জিয়ারুল হক : বিমান উড্ডয়নকে একটি উচ্চতর কারিগরি পেশা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ উড্ডয়ন এবং এয়ারক্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণে যতœবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বাসস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেফটি সেমিনারে সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। বিমান উড্ডয়নে পেশাগত দক্ষতার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দক্ষতা একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, তেমনি সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্যেও বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এভিয়েশন সেক্টরের মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে আমাদের বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমানের ফ্লাইট সেফটি রেকর্ড অত্যন্ত সন্তোষজনক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমাদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইসিএও) এর ফ্লাইট সেফটি সমীক্ষায় ঈর্ষণীয় ৭৫ দশমিক ৪৬ ভাগ নম্বর অর্জন করেছে, যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্প্রতি নিরাপদ উড্ডয়নের মানদ-ে পাঁচ তারকার আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক এভিয়েশন সেফটি অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথোরিটির টেকনিক্যাল রিভিউয়ে ক্যাটাগরি-১ ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই সেমিনারে এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘টিম এফোর্ট ক্যান এনশিউর টিম সেফটি।’
যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, তুরষ্ক, ইন্দোনেশিয়ার, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, মিশর, ওমান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং বাংলাদেশসহ চারটি মহাদেশের ১৬টি দেশের বিমান বাহিনীর সদস্য ও আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অথোরিটির (আইসিএও) প্রতিনিধিগণ এবারের সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
বিগত দুই দিন এখানে বিমান দুর্ঘটনা প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার উন্নয়নে দেশি-বিদেশি সামরিক-অসামরিক সকল সংস্থার মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি নিরাপদ উড্ডয়ন সংক্রান্ত নতুন নতুন ধারণা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুহাম্মদ মাফিদুর রহমান এবং ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক এয়ার কমোডর মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান বক্তৃতা করেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্যাভেলিয়ন ঘুরে দেখেন।
এ সময় কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে ১২ হাজার ফুটে বর্ধিতকরণসহ সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রূপান্তরের উদ্যোগ, বাগেরহাটে খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান আছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে তার সরকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭ প্রণয়ন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করার পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পৌনে এগারো বছরে বিমান বহরে আমরা বোয়িং কোম্পানির চারটি অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বিমান যুক্ত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪টি বি-৭৭৭,২টি বি-৭৩৭ এবং ৪টি বি-৭৮৭।
তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে, উন্নত যুদ্ধ বিমান, র্যাডার এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি শক্তিশালী বিমান বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশ বিমানকে আধুনিকীকরণের জন্য আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব