চট্টগ্রাম বন্দরে ৮০ হাজার টন নিলাম পণ্যের জট
শোভন দত্ত : চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস)। বন্দরের প্রতি ইঞ্চি জায়গা অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু বন্দরের জায়গা দখল করে রয়েছে প্রায় চার হাজার কন্টেইনার। এগুলোতে রয়েছে নিলামযোগ্য পণ্য। এছাড়াও পড়ে রয়েছে বিভিন্ন গাড়ি। বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার কন্টেইনার ও পণ্যজটের ফলে আটকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। শেয়ার বিজ
জটিলতায় বছরের পর বছর এসব কন্টেইনার ও গাড়ি নিলাম হয় না। ফলে দ্রুত নিলাম করে মূল্যবান জায়গা খালি করতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহায়তা চেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে নিলামের হিস্যা হিসেবে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাস্টমসকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, বন্দরের অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ নিলামযোগ্য বহু পণ্য, কন্টেইনার, ধ্বংসযোগ্য কার্গো ও বিস্ফোরক পড়ে রয়েছে। নিলাম আয়োজন ও ধ্বংসকার্য দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রতি মাসে চিঠি দিয়ে কাস্টমসকে অনুরোধ করা হয়। বিপুল পরিমাণ অ-খালাস করা নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য পণ্য আইন অনুযায়ী নিলাম ও ধ্বংসের জন্য দালিলিকভাবে যথাসময়ে কাস্টমসকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু নিলাম ও ধ্বংস না করায় তা কায়িকভাবে বন্দরের ইয়ার্ড ও শেডে রয়ে যায়। ফলে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ইয়ার্ড ও শেডের ৮০ হাজার ৩৭১ টন পণ্য, কন্টেইনার, ধ্বংসযোগ্য কার্গো ও বিস্ফোরক পড়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, পড়ে থাকা নিলামযোগ্য গাড়ির পরিমাণ ৩৭৩ ইউনিট, যার ওজন ৭৪৬ টন। এসব গাড়ি কয়েক বছর ধরে পড়ে রয়েছে। জটিলতার কারণে নিলাম হচ্ছে না। ২০ এফসিএল কন্টেইনার রয়েছে এক হাজার ৯৫৪ টিইউএস; যার ওজন ৩১ হাজার ২৬৪ টন। ৪০ এফসিএল কন্টেইনার রয়েছে দুই হাজার ১৫২ বক্স বা চার হাজার ৩০৪ টিইউএস; যার ওজন ৪৩ হাজার ৪০ টন। এলসিএল কার্গো ৬৮ হাজার ৫৮৯ প্যাকেজ; যার ওজন তিন হাজার ৭২০ টন। বাল্ক কার্গো রয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৮ প্যাকেজ; যার ওজন এক হাজার ৬০১ টন। সর্বমোট ৮০ হাজার ৩৭১ টনের পণ্য, কন্টেইনার বন্দরে পড়ে রয়েছে। নিলামযোগ্য এসব পণ্য, কন্টেইনার ও গাড়ি ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে পড়ে রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, নিলামযোগ্য পণ্য দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে। অনেক পণ্য বাণিজ্যিকভাবে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। ক্ষতি হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। ফলে দ্রুত নিলাম করে এসব পণ্য খালাস করা প্রয়োজন। দ্রুত নিলাম হলে বন্দরের মূল্যবান জায়গা খালি হওয়ার পাশাপাশি সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব পাবে। সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়।
চিঠিতে বন্দরের হিস্যা হিসেবে প্রায় ৭৯ কোটি টাকা পরিশোধের অনুরোধ করা হয়। এতে বলা হয়, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিলামে বিক্রি করা পণ্যের অর্থের ওপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের কাছে প্রায় ৭৮ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও নানা অজুহাতে কাস্টমস এ টাকা পরিশোধ করছে না।