আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
দুর্বল বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বাড়ছে ডলারে লেনদেন
মেরাজ মেভিজ : সম্প্রতি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ানোর নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মার্কিন মুদ্রা নির্ভর দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় এতে সরাসরি প্রভাব পড়বে আমদানিতে। বিশ্বজুড়েই অবশ্য আমদানী-রপ্তানিতেও বাড়ছে মার্কিন মুদ্রার ওপর একক নির্ভরশীলতা।
এমতাবস্থায় ভারত ও চীনের মতো পাশ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য নীতিতে মুদ্রা ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন এনে সরাসরি মুদ্রা ব্যবহার করতে পারলে খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এমন তথ্য। বিআইবিএম-এর নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস. এম. মনিরুজ্জামান এ সম্পর্কে শেষ এক দশকের তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমদানির ক্ষেত্রে ৮৯ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে এক দশকে আমদানি লেনদেনের ৮৫ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। রপ্তানির ক্ষেত্রে লেনদেনের ৯৭ শতাংশ ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে শুধু নয় সারা বিশ্বে একই ধরনের চিত্র। তবে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে ডলারের সমকক্ষ কোনো মুদ্রা ব্যবহারও সম্ভব নয়। তবে আলোচনা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব।
বিআইবিএমের এই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এলসি গুলো যখন খোলা হয় তখন সাধারণত ডলারেই খোলা হয়। তবে এরপর পরিশোধের সময় আমরা অন্য মুদ্রা ব্যবস্থায়ও পরিশোধ করে থাকি। অন্য দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় এটা নিতে চাইলে সে দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় যেতে হয়। তবে ভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থায় যে বাণিজ্য হয় না তা কিন্তু নয়।
সচিবের কথারই পুনরাবৃত্তি পাওয়া যায় গতকাল আয়োজিত ‘ইউজিং ইউএস ডলার ইন ফরেন ট্রেড: ইজ দেয়ার এনি অল্টারনেটিভ অপশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম আনিসুর রহমান বলেন, মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য দেশের সাথে সরাসরি বাণিজ্যিক লেনদেন খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। চায়নার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে একটি অ্যাকাউন্ট চালু করতে আমাদের দেড় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপরেও সেই চুক্তিপত্রের সমস্ত ভাষা চাইনিজ। ইংরেজিতে ভাষান্তর করার কোন সুযোগ দেয়া হয়নি আমাদের। এরকম শর্ত আরোপ করলে যত বড়ই অর্থনীতি হোক না কেন তাদের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেনে সরাসরি মুদ্রার ব্যবহার চালু করা খুবই কঠিন।
ডলারের উর্ধমুখী গতিতে আলোচনার মাধ্যমে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সরাসরি মুদ্রা বিনিময়ে বাণিজ্য করতে পারলে তা লাভজনক হবে বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি। তিনি বলেন, পারিপার্শ্বিক দিক বিবেচনায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার ব্যবহারই নিরাপদ। তবে ডলারের বিকল্প হিসেবে অন্য কোন মুদ্রা ব্যবহার লাভজনক হলে তা উৎসাহিত করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে সেই সব দেশের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। যা লেনদেনের খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনবে।