আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
দেশের ৩ বিলিয়ন টন কয়লা অব্যবহৃত থাকার আশঙ্কা
শাহীন চৌধুরী : বিশ^ব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জ্বালানি হিসেবে তাপ কয়লার ব্যবহার কমে আসছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির উদ্বৃত্ত দিন দিন বাড়ছে। একই কারণে শীঘ্রই কয়লার ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আবিষ্কৃত ৫টি খনিতে মজুত কয়লার পরিমাণ ৩ হাজার ১৯৭ মিলিয়ন টন। আবিষ্কৃত এই কয়লার প্রজ্জ্বলন ক্ষমতা ৫৩ টিসিএফ গ্যাসের সমতুল্য, যা দেশে এ পর্যন্ত আবিস্কৃত গ্যাসের প্রায় ৪ গুণ।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে নির্ধারিত সময়ে কয়লা ব্যবহার না হওয়ায় মজুত ৩ হাজার মিলিয়ন টনের অধিক কয়লা অব্যবহৃত থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, আবিষ্কৃত কয়লা কাজে লাগানো গেলে আমাদের জ্বালানির জন্য আর বিদেশের উপর নির্ভর করতে হতো না। এদিকে কয়লার বাজারবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পেরেট অ্যাসোসিয়েটসের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে, চলতি বছর শেষে বিশ্বব্যাপী কয়লার উদ্বৃত্ত দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৯০ লাখ টন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রাক্কলন প্রতিবেদনে বলেছে, তাপ কয়লার বৈশ্বিক বাজার বড় ধরনের উদ্বৃত্তের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার কমে আসায় এ উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় এ পরিমাণ কম। চলতি বছর মে মাসে করা ওই প্রাক্কলনে কয়লার উদ্বৃত্ত বাজার ধরা হয়েছিলো ২ কোটি ৪০ লাখ টন। তবে ২০২০ ও ২০২১ সালে কয়লার সরবরাহ ও চাহিদা কাছাকাছি থাকবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের বাকি দিনগুলোয় আটলান্টিক উপক‚লের দেশগুলোয় চাহিদা কমে গেলেও চীনের বাজারে কয়লার রপ্তানি ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। এছাড়া ইইউ ১৫ দেশগুলোয় চলতি বছর কয়লা আমদানি ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়াতে পারে ৭ কোটি ২৩ লাখ টনে। যেখানে আটলান্টিক ও ভ‚মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় আমদানি ১৬ শতাংশ কমে দাঁড়াতে পারে ১৩ কোটি ২ লাখ টনে। তবে এ অঞ্চলে ২০২০ সালে আমদানি আরো কমে ১২ কোটি ৫০ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে দেশে বিপুল পরিমাণ কয়লা মজুত থাকলেও ব্যবহারের অবস্থা একেবারেই নাজুক। সূত্রমতে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্পটি ১৯৯৪ সালে তৎকালীন সরকার ছোট আকারে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। অল্প সময়ের মধ্যে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চীনের চায়না মেশিনারী ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি)র চুক্তি হয়। প্রায় ৩শ একর জমির উপর প্রকল্পটি গৃহীত হয়। ১৯৯৮ সালে খনির ভ‚-গর্ভে পানি প্রবাহের কারণে বিপর্যয় দেখা দিলে খনি প্রকল্পের কাজ ২২ মাস বন্ধ থকে। ২ বছর পর ২০০৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। খনির ডিজাইন পরিবর্তন করে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ আবারও পিছিয়ে যায়। ফলে প্রকল্পের ব্যয় আরো ৫শ কোটি টাকা বেড়ে যায়। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৮শ ৮৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু সব মিলিয়ে ব্যয় করা হয় ১হাজার ৪শ ৩১ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, ১৯৮৫ সালে বিওএইচপি নামক একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর, বিরামপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে আরেকটি কয়লা খনি আবিষ্কার করে। ১৯৯৭ সালে এশিয়া এনার্জি এই এলাকায় ১০৭টি কূপ খননের মাধ্যমে উন্নতমানের কয়লা আবিষ্কার করে। এই খনিতে ৬.৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি ২শ কোটি মার্কিন ব্যয় করেছে বলে তাদের দাবি। কিন্তু সরকারের নির্দেশ না পাওয়ায় কোম্পানিটি পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
অপরদিকে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার দীঘিপাড়া কয়লা খনিটি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ভ‚-তাত্তি¡ক জরিপ অধিদপ্তর আবিষ্কার করে। দীর্ঘ ১ যুগ ধরে বেশ কয়েকটি কুপ খনন করে ৫শ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদের পরিমাণ যাচাই করেন। বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিসিএমসিএল এর মাধ্যমে ৩ বছর মেয়াদি জরিপ কাজ চলছে।
দেশের ৪র্থ কয়লা খনি হচ্ছে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ। ১৯৬৫ সালে সার্ভে করে ভ‚গর্ভে মজুদ কয়লা নির্ধারণ করেন ১ হাজার ৫শ মিলিয়ন টন। ভ‚গর্ভের ৯শ থেকে ১ হাজার মিটার গভীরে ১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কয়লা রয়েছে। ৫ম কয়লা খনিটির অবস্থান হচ্ছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীরে। ১৯৯৫ সালে আবিষ্কৃত ১১ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৫৭ থেকে ৪৮৩ মিটার গভীরতায় কয়লার মজুদের পরিমাণ ৬শ ৮৫ মিলিয়ন টন। এই ৫টি খনির মজুদ কয়লা দেশের জ্বালানি খাতের জন্য হতে পারে বড় সহায়ক।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম তামিম বলেন, দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় বড় সহায়ক হতে পারে দেশীয় কয়লা, কিন্তু তা উত্তোলনের কোনও উদ্যোগ নেই। বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার চেয়ে দ্রæত দেশীয় কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলে আমাদের বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি গ্যাসের উপর চাপও কমবে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান