মো. আখতারুজ্জামান : প্রতিনিয়ত ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেও এ ঋণের সূচক নি¤œমুখী করতে পারছে না সরকার। সর্বশেষ যে বিশেষ সুযোগ সরকার দিয়েছে তাতে তেমন সারা পাওয়া যায়নি। খেলাপিদের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোরও পুনঃতফসিলে আগ্রহ কম দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য যে সময় বেঁধে দেয় সেই সময়ে সব ব্যাংক মিলে আবেদন পড়ে মাত্র ৪ হাজারটি। যেখানে তফসিলি ব্যাংক ঋণখেলাপির সংখ্যা এক লাখ ২৫ হাজার ৭৫ জন। তবে, পুনঃতফসিল সুবিধা পাওয়া ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে কোনো নতুন ঋণ সুবিধা না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে করে আবেদনে অনিহা দেখা গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন। এদের কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যদিও আইএমএফ বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হবে।
দেশের খেলাপি ঋণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদন বলেছে, বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। আবার এরাই বেশি প্রভাবশালী। এদের ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ আছে এবং ধনী, এমন কিছু ব্যবসায়ী ঋণ ফেরত দেয়ার কোনো তাগিদই অনুভব করেন না। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে বলেছিলেন ব্যাংকিং খাতে এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। কীভাবে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা যায় সে জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। ওই কমিটির সুপারিশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ১৬ মে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শিরোনামে একটি সার্কুলার জারি করা হয়।
জানা যায়, মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে আবেদনের সময়সীমা গত ২০ অক্টোবর শেষ হয়ে যায়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিশেষ সুবিধার আওতায় আবেদন করেছেন প্রায় ৪ হাজার ঋণখেলাপি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে এক হাজার ৫০০, জনতা ব্যাংকে ৮০০, বেসিক ব্যাংকে ৫৫০, অগ্রণী ব্যাংকে ৪০০, রূপালী ব্যাংকে ২৫০ এবং বিডিবিএলে ২৫০ জনের আবেদন জমা পড়েছে। বাকি ২৫০টি আবেদন বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে করা হয়েছে। এ পরিসংখ্যানই বলছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আবেদন কম গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ দিন দিন বেড়েই চলছে, যা ব্যাংক খাতের জন্য অশনি সংকেত। ভালোভাবে লাগাম টানতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে দেখেশুনে দিতে হবে। অনৈতিকভাবে যাতে পুনঃতফসিল সুবিধা নিতে না পারে তা তদারক করতে হবে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব