মো. আখতারুজ্জামান : যে সমস্ত ব্যক্তির হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে তলব করেছে তাদের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে দুদক। চিঠিতে যে তথ্য জানতে চেয়েছে তাহচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়টি করে ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তাতে কি পরিমান টাকা রয়েছে এবং কবে কার কার সাথে লেনদেন হয়েছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাবের অর্থের উৎস সম্পর্কে তথ্যের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যে তথ্য পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকের হিসাবে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে এটা সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংক খাতের খারাপ খবর তবে ভবিষতের জন্য ভালো। আমাদের ব্যাংকগুলোতে একটা কালচার চালু রয়েছে যে, তোমার যেকোন উৎসের টাকা ব্যাংকে রাখতে পারবে। আর এটাকেই কাজে লাগায় কালোবাজারীরা। যদিও আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম রয়েছে যে প্রত্যেকটা হিসাবের টাকার উৎস জানাতে হবে। সেটা যদি সঠিক উৎসের হয় তবেই তা ব্যাংকে রাখা যাবে।’
‘এসব ব্যাংক হিসাবে অলস টাকা রেখে দেয়া হয়। এ টাকা থেকে সরকারকে কোন ধরনের ট্যাক্স দেয় না। পরবর্তীতে এ টাকা নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা হতে পারে না।’
জানা গেছে, হিসাব জব্দ তালিকায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই সরকারি দলের সদস্য। এ তালিকায় রয়েছেন, সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নজরুল ইসলাম বাবু, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অনলাইন ক্যাসিনো স¤্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগের জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী স¤্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়- ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে থাকা সব ধরনের সম্পদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এ কাজগুলো করছে, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।