চাঁদাবাজির মামলায় ডিএসসিসির ৩৯ নম্বর কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
সুজন কৈরী : রাজধানীর ওয়ারী থানায় দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলায় ডিএসসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার দুপুরে টিকাটুলীর কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজনা বর্ধক ওষুধ।
র্যাব ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, অভিযানে কাউন্সিলর মঞ্জুর গাড়িচালক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, কাজী মো. রনি নামে রাজধানী সুপার মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী গত বুধবার ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। তার অভিযোগ, কাউন্সিলর মঞ্জু তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং ওই টাকা না দেয়ায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর র্যাব অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর ভিত্তিতেই অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব ৩ এর অধিনায়ক বলেন, মঞ্জুর বৈধ কোনো আয় নেই। মূলত চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলবাজির মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। সেই টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি আইন বহির্ভূতভাবে কোনো অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর আরো অন্তত অর্ধশত অভিযোগ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তা শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, বুধবার দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলাটি ছাড়াও আট কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে আরো দুটি মামলা রয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। কাউন্সিলর মঞ্জু দেশের বাইরে কী পরিমাণ টাকা পাচার করেছেন জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন আমরা এটা বলতে পারবো না। সিআইডি এবং দুদক তদন্ত করবে।
শফিউল্লাহ বুলবুল জানান, আমরা তার কার্যালয় থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পেয়েছি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হবে। মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। এতো অভিযোগ থাকার পরও তাকে গ্রেপ্তারে সময় লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে শুধু গ্রেপ্তার করলেই হবে না। গ্রেপ্তার পরবর্তী মামলা চালানোর মতো সাক্ষী থাকতে হবে। এসব কারণে আমরা যথাসময়ে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে পারিনি। সঠিক সময় আসায় তাকে গ্রেপ্তার করেছি। যে বাসায় মঞ্জু থাকেন, সেটিও দখল করা। এমন অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। তবে তার কয়টা বাড়ি আছে সে বিষয় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে ৩৯ নম্বর কাউন্সিলরের কার্যালয় ঘিরে ফেলে র্যাব সদস্যরা। এরপর ভেতরে ঢোকেন তারা। সেখান থেকে পিস্তল, মাদক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এরপর মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়ে তার হাটখোলার বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। চারতলা ওই বাড়িতে প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দেশিয় মদ, বিয়ার ও মঞ্জুর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এছাড়া সেখানে বেশ কিছু জমির দলিল ও কাগজপত্রও পেয়েছে র্যাব। ভবনের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে কাঠের তৈরি একটি বাক্স পাওয়া গেলেও সেখানে কিছু মেলেনি বলে জানিয়েছে র্যাব।
ওই বাসায় অভিযানের সময় দেখা যায়, চারতলা ওই ভবনের সিঁড়ি, গ্যারেজ বেশ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। নিচতলায় কাউকে দেখা যায়নি। দোতলায় তালা লাগানো রয়েছে। তবে তিনতলা ও চারতলা নিয়ে গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বেশ পরিস্কার দেখা গেছে। দামি টাইলস আর আসবাবপত্র দিয়ে প্রতিটি কক্ষ সাজানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো থাকতে দেখা গেছে সাবেক মন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মঞ্জুর ছবি। এছাড়া কক্ষে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেওমঞ্জুর ছবি টাঙ্গানো অবস্থায় দেখা যায়।
বাসায় অভিযান চলাকালে সুমি বেগম নামে এক নারী নিজেকে মঞ্জুর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বলেন, বাড়িটি নিয়ে মামলা চলছে। তবে কার সঙ্গে বা কী অভিযোগে মামলাÑসে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি। সুমি বেগম বলেন, ঢাকায় মঞ্জুর কেউ থাকে না। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে আমেরিকায় থাকে। মঞ্জু নিজেও নিয়মিত আমেরিকায় যাতায়াত করেন। মঞ্জুর মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আজিজুল হক দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গোলাপবাগে নিজ বাসায় থাকেন। আর মঞ্জুর সুমি বেগম ও মঞ্জুর গাড়িচালক সাজ্জাদ থাকতেন। সেখান থেকেই সাজ্জাদকে র্যাব গ্রেপ্তার করে র্যাব। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান