পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে কয়লা লাগবে ৪০ লাখ টন
শাহীন চৌধুরী : দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নির্মাণাধীন পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে বছরে ৪০ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যেই ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা বোঝাই জাহাজ বন্দরে ভিড়তে শুরু করেছে। আর বৃহৎ আকারের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর মধ্যদিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের নবযুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। পরিবেশ ঠিক রাখতে এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। অবশ্য সমুদ্র থেকে পায়রার জেটি পর্যন্ত নদীর গভীরতা ঠিক রাখাকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছেন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের পরিচালক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ফেজ অর্থাৎ ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনে যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যেই। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের মূল্য হবে ৬ টাকা ৫০ পয়সা।
সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ঐ অংশের ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, কনসালট্যান্ট নিয়োগের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। গত বছর নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় ফেজের ফিজিক্যাল ওয়ার্কও শুরু হয়ে গেছে। এই ফেজের বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে ২০২২ সালে জুন মাসে। এই অংশেরও প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই ফেজ মিলিয়ে এই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট। দেশে এ পর্যন্ত গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প।
বঙ্গোপসাগর থেকে রামনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দরের অবস্থান। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ দিয়েই কয়লা বোঝাই জাহাজ আসে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। প্রথম থেকেই চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এখনও নদী খননের পুরো কাজ শেষ হয়নি। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লাবোঝাই জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে এখানে। সম্প্রতি দ্বিতীয় জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করেছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, পায়রা বন্দরকে চালু রাখার জন্য একটি বাইরের কোম্পানীর সাথে চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তির ভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ খনন না করায় নিজেদের টাকায় আপাতত নদী খনন করছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নকারী কোম্পানি- বিসিপিসিএল। একটি ইউনিটের জন্য দৈনিক সাড়ে ৬ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। দুটি হলে প্রতিদিন ১৩ হাজার মেট্রিক টন। এতো কয়লা আনতে নদীর গভীরতা ঠিক রাখা খুবই জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পের অন্যতম পায়রা কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ৫০ ভাগ ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং ৫০ ভাগ অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হবে। জাহাজে আসা কয়লা খালাশের জন্য এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একাধিক নিজস্ব জেটি রয়েছে যাতে কোন বন্দরের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন বা ৪০ লাখ টন কায়লা ব্যবহৃত হবে। কোন অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সবসময় দুই মাসের কয়লা মজুত রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবি এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ক্রয় করে তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ২৫ বছর।