কৃষিজমি বাঁচিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে হবে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
শোভন দত্ত : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ১০০ কোটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। কারও শিল্প-কারখানা করার দরকার হলে সেখানে আমরা প্লট দিয়ে দেব। কৃষি জমিকে নষ্ট করা যাবে না। বাসস, সারাবাংলা,বাংলাট্রিবিউন
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সময় সারের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। এখন আর কৃষককে জীবন দিতে হয় না। এখন সার কৃষকের হাতে পৌঁছে যায়।’ কৃষকের জন্য বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। যেন কৃষক লীগের নেতারা কৃষকের কথা বলতে পারেন। কৃষি কাজে যারা ভালো ফলাফল দেবেন, তাদের গবেষণা, কৃষি উৎপাদন ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু তহবিল গঠন করেছিলেন। এই তহবিল থেকে কৃষিক্ষেত্রে অবদানের জন্য পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার পর এই পুরস্কার বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে আমরা ক্ষমতায় এসে আইন করে কৃষকদের জন্য পুরস্কার ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি।
বিএনপি এসে বিএডিসি বন্ধ করে দিয়েছিলো। বিএনপির যুক্তি হলো বিএডিসি নাকি লাভজনক না। সবসময় সবকিছুতে লাভ-লোকসান দেখলে চলে না। দেশের মানুষ কীভাবে উপকৃত হবে সেটিই আমাদের দেখতে হবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বর্গাচাষি এরা অন্যের জমি চাষ করেন। নিজেদের কোনো জমি নেই। তারা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিতে পারতো না। আমি কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বর্গাচাষিদের জন্য বিনা জামানতে স্বল্পসুদে কৃষি ঋণ দিতে শুরু করি। আমরা কৃষিতে ভর্তুকি দিই। আপনারা জানেন ৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিলো। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ অঞ্চল পানির নিচে ছিলো। বিদেশিরা বলেছিলো, দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমরা বলেছি, একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না। আমরা হাতে রুটি বানিয়েছি এবং হেলিকপ্টারে তা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া এয়ারফোর্সের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সারা, চারা পৌঁছে দিয়েছি। যাতে কৃষকরা উৎপাদনে যেতে পারে।’
কৃষক লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করি। বাংলাদেশ আজ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেদিন পার্লামেন্টে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো সেদিন খালেদা জিয়া ও সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। জবাবে আমরা বলেছিলাম, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক হতে চাই না। আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। এই মাটি ও মানুষ দিয়েই আমরা দেশকে গড়ে তুলবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া শুরু করি। ওই সময় বিশ্ব ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। কৃষকদের ভর্তুকি দেয়া যাবে না। কৃষকদের ভর্তুকি দিলে আমরা টাকা দেবো না। আমি বলেছিলাম, আপনাদের টাকা লাগবে না। আমরা আমাদের টাকা দিয়ে কৃষকদের ভর্তুকি দেবো। গত ১০ বছরে আমরা ৬৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে কৃষিতে বাজেট ছিলো ৭ হাজার কোটি টাকা। আমরা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বাজেট দিয়েছি। এছাড়া ২ কোটি ১৩ লাখ কৃষককে উপকরণ কার্ড দিয়েছি। আমরা যে প্রণোদনা দিচ্ছি তা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। এছাড়া তারা ওই কার্ড দেখালে সেখান থেকে স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ কিনতে পারবে আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
কৃষক লীগের সম্মেলনের প্রধান অতিথি আরও বলেন, ‘আমরা ফসলকে বহুমুখি করতে চাই। এ পর্যন্ত ১০৮টি ধানের জাত আবিষ্কার করতে পেরেছি। আয়রন ও জিংকসমৃদ্ধ চাল উৎপাদন করতে পেরেছি। আমি নিজেও সেই চাল খেয়ে দেখেছি। এছাড়াও ৪৪২টি উৎপাদনপ্রযুক্তি আমরা উদ্ভাবন করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি আমরা এবার পুষ্টির দিকে নজর দিচ্ছি। আমরা মাছ ও খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছি। এছাড়া তরি-তরকারি উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে আছি। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব