প্রশ্নফাঁসের টাকায় ইব্রাহীমের বিলাসবহুল বাড়ি আদালতের নির্দেশে ক্রোক
জিয়ারুল হক : নড়াইলের নিজ গ্রামে করেছিলেন বিলাসবহুল ‘ডুপ্লেক্স’ বাড়ি, খুলনার খালিশপুরে গড়ে তুলেছিলেন ছয় তলা আরেকটি বাড়ি। কিন্তু এর মধ্যেই প্রশ্নফাঁসের দায়ে সিআইডির জালে আটকা পড়েন। আদালতে তার বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয়া হয়। এরপর জেলও খাটেন। কিন্তু আটকে রাখা যায়নি। অল্প কয়েকদিন পরেই জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। তবে এবার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার স্থাবর সম্পদ হিসেবে খুলনা ও নড়াইলের বাড়ি দুটি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আলোচিত এই প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের হোতার নাম ইব্রাহীম। ৩ নভেম্বর ঢাকার সিনিয়ার স্পেশাল জজ আদালতের ই আদেশের পর পুলিশ তার দুই বাড়ি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
জানা যায়, দেশব্যাপী আলোচিত প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আবাসিক হলে অভিযান চালিয়ে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাফি নামে ভর্তিচ্ছু একজন শিক্ষার্থীকে। এই ঘটনার দিনই (২০ অক্টোবর, ২০১৭) শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। এরপর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রশ্নফাঁসে জড়িত বিশাল এক চক্রের সদস্যদের নাম। ধারাবাহিক অভিযানে মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলোচিত এই চক্রটির মাস্টারমাইন্ড ছিল বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম।
সিআইডির তদন্তে প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের সন্ধানও পাওয়া যায়। এরপর এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘তদন্তের সময় জানা যায়, ইব্রাহীমসহ অন্যরা প্রশ্নফাঁস করে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে উঠে আসার পর তারা এসব সম্পদ ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত সেই আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে ইব্রাহীমের দুই বাড়ি ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
সিআইডির এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসকারীর সম্পদ জব্দ করার মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণ হলো যে, অবৈধভাবে বা ক্রাইমের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করলেও তা ধরে রাখা যায় না। এটি অন্যান্য অপরাধীদের কাছেও একটি বার্তা হিসেবে যাবে।’
আদালত ও সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে নিয়মিত মামলার পাশাপাশি ৮ জনের বিরুদ্ধে এই বছরের ৭ জানুয়ারি উত্তরা-পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করে সিআইডি। মামলার তদন্তে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে ইব্রাহীমের বিপুল সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। ইব্রাহীম খুলনার খালিশপুর থানার মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার (দ্বিতীয় পর্যায়) ২১ নম্বর সড়কের ৩২৪ নম্বর প্লটে চার কাঠ জমি কিনেছিল। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই ৩৭১৯ নম্বর দলিলের মাধ্যমে কেনা এই জমিতে ছয় তলা পাকা ভবন তৈরি করে। ওই বছরেরই ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তৈরি করা ওই ভবনে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়া নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ৬ নং খাসিয়াল ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামে প্রায় একই সময়ে ৩১ শতাংশ জমির ওপর একটি ডুপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, আদালত নড়াইলের ডুপ্লেক্স বাড়িটি ক্রোক করে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার এবং খুলনার ছয় তলা বাড়িটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশ দুই বাড়িই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান