আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
বাণিজ্যযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের লোকসান হাজার হাজার কোটি ডলার
নূর মাজিদ : রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংঘাতে কোন পক্ষ জয়ী বা কে হারছে এমন বিশ্লেষনের অবকাশ থাকলেও, সা¤প্রতিক তথ্যাবলী নির্দেশ করছে উভয়পক্ষের ক্ষতির পরিমাণ। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কমে আসার প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক লোকসানটাই নির্দেশ করা হয় তথ্যচিত্রে। এর মাধ্যমে বাণিজ্য সংঘাত নিরসনে কেন এখন দুই পক্ষেই তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেটা বুঝতেও অনেকটা সুবিধা হয়। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে। খবর : সিএনবিসি।
প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ, বাণিজ্য সংঘাতের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই বিগত নয় মাসের তুলনায় চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৫ হাজার ৩শ কোটি ডলার কমেছে। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৪শ কোটি ডলার। এখানে চীনকে পরাজিত পক্ষ বলে ট্রা¤প প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হলেও, তা নির্ভুল নয়, বরং যুক্তির মাধ্যমে খÐনযোগ্য। সার্বিক পরিধিতেই যুক্তরাষ্ট্র চীনে অনেক কম রপ্তানি করে, আমদানির তুলনায়। তাই বাণিজ্য সংঘাতে তার রপ্তানির কমার ক্ষতিটাও কোন অংশেই চীনের চাইতে কম নয়। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা খুবই দৃশ্যমান।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে চীনে মার্কিন পণ্য রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানির আকার কমে সাড়ে ১৩ শতাংশ। দুই দেশেরই বিশেষ বিশেষ কিছু খাত এই ক্ষতির পুরো ভার বহন করছে। মার্কিন কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য রপ্তানির মাঝে অন্যতম। বাণিজ্য দ্বৈরথ শুরুর আগে ২০১৭ সালের প্রথম নয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে চীনে মার্কিন খনিজ আকরিক রপ্তানি কমেছে ৬৫ শতাংশ। বনজ স¤পদ এবং কৃষিজ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে ৩৫ শতাংশ।
অর্থের অংকে মার্কিন কৃষিজ পণ্য রপ্তানি কমেছে ২শ কোটি ডলার। পরিবহণ যন্ত্রপাতি ও যানবাহন রপ্তানিও কমেছে আশংকাজনক হারে। এর পেছনে শুল্কের পাশাপাশি বোয়িং-৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজের দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা ত্রæটির বিষয়টিও দায়ী। উড়োজাহাজ আমদানি কমার কারণেই পরিবহণখাতের রপ্তানি কমে ৫৮০ কোটি ডলার। মার্কিন অর্থনীতিবিদদের শংকা চীনের ভোক্তাবাজারে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই যে অবস্থান হারিয়েছে তা অপূরণীয়, এবং এটা সংশি¬ষ্ট খাতগুলোর জন্য তৈরি করেছে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির বলয়।
অবশ্য, সুখবর হলো বাণিজ্য সমঝোতার মাধ্যমে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উষ্ণতা ফিরলেই, সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার মার্কিন খাতগুলো ঘুরে দাঁড়াবে। এমনকি তাদের রপ্তানির পরিমাণও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এর পাশাপাশি চীনের বাইরে বিকল্প বাজারের সংস্থানও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও, পুরোপুরি চীন নির্ভরতা কাটানো সম্ভব নয়। ঝুঁকিটাও সেখানেই। চীনা ভোক্তারা যদি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই বিকল্প উৎপাদন উৎস থেকে ক্রয়ে ঝোঁকেন তবে বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় অংশে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব হারানোর ঝুঁকি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। ২০২০ সাল নির্বাচনী বছর হওয়ায় এই দায় থেকে ট্রা¤প সহজেই নিষ্কৃতি পাবেন, এমন সম্ভাবনাও কম। বিশেষত, বণিক গোষ্ঠীর তীব্র চাপ মাথায় রেখেই এখন তাকে সামনের পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব