অমৃত কথা • আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
শুদ্ধি অভিযানে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে
মেরাজ মেভিজ ও মো. আখতারুজ্জামান : মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানে রাজস্ব আয় বাড়বে বলেই প্রত্যাশা করছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। তবে শুদ্ধি অভিযানের কারণে সরকারের যেসব নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে তা যদি সময়ের মধ্যে শেষ না হয় তবে রাজস্ব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো উৎসে কর। সেখান থেকে ৫০ শতাংশ রাজস্ব আহরণ হয়। এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করেন, গত বছর থেকেই রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ছিলো। কারণ ব্যাংকের লভাংশ কমে গেছে ও সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কম হচ্ছিলো। এ ছাড়া বেসরকারিখাতের বড় বিনিয়োগকারীরারাও এবার লাভ কম করেছে। পুঁজিবাজারে লিস্টেড ৯ কোম্পানি শেয়ার হোল্ডারদের লভাংশ দিয়েছে।
এই অবস্থায় রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যেকোনো শুদ্ধি অভিযানের পরে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ে। আবার আর্থিকখাতে শৃংখলাও ফিরে আসে। এই শুদ্ধি অভিযানের পরে রাজস্ব খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
গত বছরের আগস্টে যেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ১৪ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, চলতি বছরের আগস্টে তা নেমে এসেছে ১৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় কমেছে ৭৫৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেখানে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা সেখানে গত আগস্টে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। যা জুলাই মাসের চেয়ে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা কম। অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ১৬ হাজার ১২৩ কোটি টাকা।
এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় সরকারের শুদ্ধি অভিযান। তবে তার প্রভাব কতোটুকু তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ধারাবাহিক ঘাটতির মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে প্রতিমাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ২৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। কারণ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও এনবিআর বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বলাবাহুল্য, সে লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়নি। এ সময়ে আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৪শ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা।
চলমান শুদ্ধি অভিযান ও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি নিয়ে জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি শুদ্ধি অভিযানের সময় রাজস্ব আদায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এতে ভয় পেয়ে কিছু লোক নিজেদের কর সঠিকভাবে পরিশোধ করেন। অন্যদিকে কর দাতাদের একটি অংশের ব্যাংক হিসাবসহ বিভিন্ন হিসাব জব্দ হয়ে যাওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের প্রাতিষ্ঠানগুলো থেকে কোনো করই আসে না। এটা আসলে ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভর করে। কারণ জব্দ হওয়া টাকাগুলো কিন্তু অপ্রদর্শিত আয়। তবে এর সার্বিক প্রভাব বুঝতে আরও সময় লাগবে। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব আদায়ে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, এনবিআর কিন্তু তা আদায় করতে পারছে না। দেশের যে হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তাতে কিন্তু এমনটা হবার কথা না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, রাজস্ব ঘাটতির সরাসরি প্রভাব পড়ছে সরকারের নেয়া ব্যাংক ঋণের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-২৪ সেপ্টেম্বর) সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২৯ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকেই ঋণ নিয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। সবমিলে সরকারের পুঞ্জীভ‚ত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা।
এর কারণ হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া। এমনকি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও (২ লাখ ৮০ হাজার কোটি) অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। ঘাটতি ছিলো ৫৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সেটাও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত ও রেজাউল আহসান। তথ্য ও ডেটা সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর