মধ্যাঞ্চলে বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত ধানচাষিরা সুদের টাকা পরিশোধে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত
মধ্যাঞ্চল প্রতিনিধি : দেশের মধ্যাঞ্চলের প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের ক্ষতি কমাতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তোড়ে ক্ষেতে নুয়ে পড়া ও পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান দ্রæত কেটে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগে ৫ জেলায় রোপা ও বোনা আমন মিলিয়ে ৫০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে লোকসানের পর লোকসান গুনতে গুনতে কৃষকের চোখে জল ছাড়া কিছুই নেই। চলতি বছর মধ্যাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক সুদে টাকা ঋণ এনে ধান চাষ করেছিল বলেও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এখন সুদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া নিয়েই যত দুশ্চিন্তা হয়েছে।
জানা গেছে, মধ্যাঞ্চলের প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের মাদারীপুর জেলায় এবার বোনা ও রোপা আমন মিলিয়ে ২৯ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর কৃষি বিভাগের জরিপে উঠে আসে এ জেলায় মাঠে রোপা ও বোনা আমন মিলিয়ে ২৬ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে ধান কাটা হয়নি। গোপালগঞ্জে ১১ হাজার ৫শ হেক্টর আমন ধানের অধিকাংশই কাটা হয়নি। একই অবস্থা শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি জেলায় চিত্রও।
মধ্যাঞ্চলের প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের বেশিভাগ ধান পেকে আসায় ‘ঝড়-বৃষ্টিতে নুয়ে পড়া ও পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান দ্রæত কেটে নিতে জেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেনে এই কৃষি কর্মকর্তারা।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবদুল কাদের বলেন, ‘গোপালগঞ্জে আমন ধানে যা ক্ষতি হয়েছে, সেসকল আমন ধান আমরা কৃষকদের দ্রæত কেটে ফেলতে বলছি। এতে কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা কম হবে।’
সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) থেকে জানানো হয়েছে, আষাঢ় মাসে বীজতলায় রোপা আমনের বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে জমিতে রোপণ করা হয় এবং এলাকাভেদে কার্তিক-অগ্রহায়ণ- =পৌষ মাসে এ ধান কাটা হয়ে থাকে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস আরও জানিয়েছে, ‘শীষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ ধানের চাল শক্ত হলে ধান ঠিকমত পেকেছে বলে বিবেচিত হবে। এ সময়ে ফসল কেটে মাড়াই করতে হবে।
‘বেশি পাকা অবস্থায় কাটলে অনেক ধান ঝরে পড়ে, শীষ ভেঙে যায়।’
মাদারীপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএসএম গফুর জানান, মাদারীপুরে বুলবুলের আঘাতের আগেই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছিল। তাই মাঠ থেকে কৃষকরা কিছু ধান আগেই কেটে নিয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে ভালো দর না পাওয়া এ জেলার কৃষকরা ঝড়ের কবলে পড়ে ধানের ক্ষতি হওয়ায় হতাশ। চলতি মৌসুমে সুদে টাকা ঋণ করে আমন চাষ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন এদের অনেকে।
মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের আমন চাষি সিদ্দিক হাওলাদার বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে শুধু লোকসানই গুনতেছি। তারপরও কৃষিকাজ ছাড়া তো আর কিছু শিখি নাই। তাই এবারো সুদে টাকা ঋণ করে তিন বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করছিলাম। কিন্তু বুলবুলে আমার সব ধান খাইয়া দিলো।’
সদরের কলাবাড়ি গ্রামের আরেক ধানচাষি দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘তার দুই বিঘা জমির আমন ধানের সব ঘূর্ণিঝড়ে শুয়ে পড়ে পানিতে ডুবে আছে। কোন কৃষি শ্রমিকও পাচ্ছি না ধানগুলো কেটে আনব। কী যে করব তার কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছি না। চোখের জলই এখন সম্বল।’
পাকা ধান বেশি দিন পানিতে থাকলে গাজিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন তিনি।
কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার কৃষক হরষিত মল্লিক, নিরঞ্জন বাড়ৈসহ একাধিক কৃষক বলেন, ‘ধান নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা শেষ হয়ে যাব।’
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার উপজেলার আমন চাষী বিমল জয়ধর বলেন, আমি তো ঋণে ঋণে এখন জর্জরিত। তার উপরে বুলবুলের সব ধান শেষ করে দিলো। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো তার কোন উপায় খুজে পাচ্ছি না।
সরকারি তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ আমন মৌসুমে দেশে ৫.৫-৫.৬ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়, এর মধ্যে ০.৩২৮ মিলিয়ন হেক্টর বোনা, ১.০৮৩ মিলিয়ন হে. স্থানীয় জাতের এবং ৪.১৭২ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে উফশী রোপা আমন চাষ হয়। ২০১৭-১৮ মৌসুমে সরকারের উদ্যোগের কারণে আমন আবাদ এলাকা দুই শতাংশ বৃদ্ধি পায়।