ডলার নির্ভরতা কমাতে গোপন মজুদের পরিমাণ বাড়াচ্ছে চীন
নূর মাজিদ : আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের লেনদেনে অধিকাংশ দেশের মতো এতোদিন মার্কিন মুদ্রাটির উপর নির্ভর করেছে চীন। কিন্তু, অন্যসব হিসেবের মতোই এখানেও প্রভাব ফেলেছে দুই দেশের বাণিজ্য মহারণ। তাই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীন এখন ডলার নির্ভরতা কমানোর নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বেজিং সাম্প্রতিক সময়ে বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্যান্য প্রধান প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশের মুদ্রা মজুদের পরিমাণ। অনেকটা নীরবেই চলছে এই কার্যক্রম। এই নিয়ে কোন আলোচনা না থাকায় আর্থিকখাতের সংশি¬ষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া, বাহিরের অনেকেই এই পরিবর্তন আঁচ করেতই পারছেনা। বাজার বিশে¬ষক সংস্থা এএনজে তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন দাবীই করে। খবর : সিএনবিসি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ রিজার্ভ মুদ্রার থেকে সরে আসার পেছনে নির্ভরতা কমানো ছাড়াও আছে অন্য আরেকটি কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে হোয়াইট হাউজ চীনের কো¤পানিগুলোতে মার্কিন বেসরকারিখাতের বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেয়ার কথা ভাবছে, এমন সংবাদ বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর সঙ্গে বেশ কিছু চীনা কো¤পানির মার্কিন বাজারের নিবন্ধন বাতিল করার কথাও জানায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। এই কারণেই পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন মুদ্রায় বিনিয়োগ (সঞ্চয় মাত্রই এক প্রকার বিনিয়োগ) কমানোর দিকে এগোচ্ছে বেজিং। এছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা এবং বন্ডের সঞ্চয়ে বিকল্প উৎস নির্ভর বৈচিত্র। লক্ষ্মণীয় মাত্রায় গোপনীয়তার কারণেই একে ছায়া সঞ্চয় বলে উলে¬খ করেছেন এএনজের বিশেষজ্ঞরা।
এই বিষয়ে প্রতিবেদনটি জানায়, এখনো চীন তার বৈদেশিক মজুদের একটি বড় অংশ মার্কিন মুদ্রায় সঞ্চয় করে। তবে অন্যান্য দেশের মুদ্রায় মজুদ বৃদ্ধির ঘটনাও এর সঙ্গে পাল¬া দিয়ে বাড়ছে। গত জুন নাগাদ চীনের ফরেক্স রিজার্ভের হিসেবেই এর প্রমাণ দেখা গেছে। ওই সময়ে মোট বৈদেশিক মুদ্রা মজুদের আনুমানিক ৫৯ শতাংশ মার্কিন ডলারে করা হয়েছিলো। তবে এই অনুমান স¤পূর্ণ নির্ভুল নয় বলেও জানানো হয়। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন ডলারসহ রিজার্ভে থাকার অন্যান্য মুদ্রার রেশিও এখনও প্রকাশ করেনি চীন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসিকে এএনজে জানায়, সঠিক অনুপাত না পাওয়া গেলেও ডলারের পাশাপাশি ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন এবং ইইউ এর একক মুদ্রা ইউরোর সঞ্চয় বাড়িয়েছে চীন।
এদিকে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের মতো সরকারি দেনায় নিজেদের ভাগ কমাচ্ছে বেজিং, এটা কোন গোপন সংবাদ নয়। এতোদিন চীন মার্কিন দেনার একটি বড় অংশ কিনে রেখেছিলো। বাণিজ্য সমরে স¤পর্কের অবনতি হওয়ায় এখন দুই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাঝে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তার কারণেই বেজিং ট্রেজারি বন্ড আরো বেশি পরিমাণ বিক্রি করছে। গত জুনে এই কারণেই চীনকে টপকে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড সঞ্চয়ে এগিয়ে যায় জাপান। ২০১৮ সালের শীর্ষ মজুদ থেকে গত ১৪ মাসে ৮ হাজার ৮শ কোটি ডলারের ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে দেয় চীন সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদন।
এদিকে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেবেই গত জুন নাগাদ চীনের কাছে ছিলো ১ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন দেনা। একইসময়ে অবশ্য চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ ক্রয় করতে থাকে। দেশটির সরকারি হিসেবেই গত অক্টোবর নাগাদ এই সোনার মজুদ ছিলো ১ হাজার ৯৫৭ দশমিক ৫ টন।