দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর আয় সবচেয়ে কম
বিশ্বজিৎ দত্ত : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সুপাররা সবচেয়ে কম আয় করে। তারা বসবাস করে দরিদ্রসীমার নিচে। তাদের প্রতিদিেিনর গড় আয় ১ ডলারের নিচে। ভারতে ও পাকিস্তানে সুইপারদের আয় ১ ডলারের উপরে। সোমবার ওয়াটারএইড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)- ‘স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও স্যানিটেশন শ্রমিকদের মর্যাদা’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।সেখানে বাংলাদেশের সেনিটেশান শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের হিসাবে বাংলাদেশে ৬০ লাখ সুইপার রয়েছে। যারা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। রিপোর্টে শ্রমিকদের নির্মম কর্ম পরিবেশের কথা উল্লেখ করে তা পরিবর্তনের উপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, স্যানিটেশনের বিশাল লম্বা চেইনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষ ও নারী স্যানিটেশন শ্রমিকরা কাজ করে। মানুষের টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে বর্জ্য নিষ্পত্তি বা পুনঃব্যবহার করা পর্যন্ত কাজে নিয়োজিত থাকে এই স্যানিটেশন শ্রমিকরা। টয়লেট পরিষ্কার করা, গভীর কূপ ও সেপটিক ট্যাংক খালি করা, সুয়ারেজ লাইন ও ম্যানহোল পরিষ্কার করা এবং পাম্পিং ষ্টেশন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিচালনা করা স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজের মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তারা কোনো সরঞ্জামাদি ও কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো সরঞ্জামাদি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়ে মনুষ্য বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নেমে পড়ে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য চরমভাবে বিপজ্জনক।
সুয়ারেজ লাইন ও সেপটিক ট্যাংকে টক্সিক গ্যাস যেমন- অ্যামোনিয়া, কার্বন মনোঅক্সাইড ও সালফার ডাইঅক্সাইড থাকায় শ্রমিকরা অজ্ঞান হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মুখে পতিত হয়ে থাকেন। যদিও বিশ্বব্যাপি কোনো পরিসংখ্যান নেই, তবে শুধুমাত্র ভারতে প্রতি পাঁচদিনে তিনজন স্যানিটেশন শ্রমিক মারা যায়, অসংখ্য শ্রমিক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে আয়ুকাল কমে যায়। অধিকার বা কোনো প্রকার সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই শ্রমিকরা এসব কাজ করে থাকে। অসঙ্গত কিংবা বিনা বেতনে কাজ করতে হয় তাদেরকে- কখনও কখনও কিছু শ্রমিকদের কাজের বিনিময় অর্থ না দিয়ে খাবার দেয়া হয়। অনেক দেশে স্যানিটেশন শ্রমিকদের কাজকে সামাজিকভাবে হেয় বা কলঙ্কজনক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়, আর তাই শ্রমিকরা প্রায়ই রাতে কাজ করে যেনো অন্যান্যদের থেকে লুকিয়ে থাকা যায়।
ওয়াটারএইড-এর সিইও টিম ওয়েইনরাইট বলেন, ‘সবাই টয়লেট ব্যবহার করে আরএর মাধ্যমে সবাই কিন্তু পানিবাহিত সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে থাকতে পারতো যদি না বর্জ্যরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে করা হতো। স্যানিটেশন শ্রমিকদের বিপজ্জনক কর্ম পরিবেশের মাঝে কাজ করতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এমনকি জীবনের জন্য মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া উপযুক্ত সরঞ্জামাদি, সম্মান এবং জীবন রক্ষাকারী কাজে নিয়োজিত হওয়ায় সে অনুযায়ী মর্যাদা পাওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে বৈষম্য ও দারিদ্র্যের শিকার হবে যা সত্যিই হতাশাজনক।’