ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে বাড়তি দামে লবণ বিক্রির হিড়িক
মো. আখতারুজ্জামান : মালিবাগ মোড়, সকাল ৯টা কয়েকজনকে মোবাইল ফোনে বলতে শোনা যায় যে তুমি কয়েক কেজি লবণ কিনে রাখো। লবণের দাম বাড়বে। এভাবেই মঙ্গলবার রাজধানীতে হঠাৎ করে লবণের চাহিদা বেড়ে যায়। ক্রেতারা বলছেন, তারা শুনেছেন লবণের কেজিপ্রতি দর ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ আশঙ্কায় তারা বাড়তি লবণ কিনে রাখছেন। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে লবণের মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে।
এদিকে সোমবার মধ্যরাত থেকেই ফেসবুকে গুজব উঠে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। ধীরে ধীরে রাতব্যাপী সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ফলে সকাল থেকেই রাজধানীর পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে লবণ কেনার ধুম উঠে যায়। তবে কে বা কারা এটি ফেসবুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করলো সে বিষয়ে জানা যায়নি।
মঙ্গলবার বেলা ৩টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের দোকানগুলোয় লবণে বাড়তি চাহিদার সঙ্গে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেউ দুই কেজি, কেউ ৫-১০ কেজি লবণ কিনছিলেন। এমনকি বন্ধ দোকান খুলেও অনেক বিক্রেতা লবণ বিক্রি করেন। রাজধানীর খিলখেত, তেজগাঁও-এর বেগুনবাড়ি, মগবাজার, মালিবাগ এলাকার বাজার ও মুদি দোকানেও লবণ কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা যায়।
রাজধানীর খিলখেতের বেপারিপাড়ার বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক রশিদ উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে লবণের চাহিদা বাড়ে। তার দোকানে অন্যদিনের মতো প্রতিকেজি মোটা লবণ ২৫ টাকা এবং চিকন ৩০ টাকা বিক্রি করে। তবে দুপুরের মধ্যে তার দোকানের সব লবণ বিক্রি হয়ে যায়।
মালিবাগ এবং মগবাজার এলাকায় বিকালে ঘুরে দেখা যায়, দোকানের বিক্রেতারা বলেছেন সকালেই লবণ শেষ হয়ে গেছে। মালিবাগ মোড়ের স্বপ্ন সুপার সপে গিয়ে দেখা যায়, তাদের যা স্টক ছিলো সব শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে লবণ না আসায় তারা ক্রেতাদের লবণ দিতে পারছে না।
মগবাজারের আগোরা সুপার সপের বিক্রেতা আল আমিন জানান, বেলা ১১টার মধ্যেই সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। বেশি দামে বিক্রি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে আমাদের এখানে বেশি দাবে বিক্রি সুযোগ নেই। এখানে মোটা লবণ ২৫ টাকা এবং চিকনটা ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মগবাজার মোড়ের ভ্যারাইটিস স্টোরের মালিক খালেক জানান, আজ হঠাৎ করে এতো লবণের এতো চাহিদা বাড়বে জানলে আগের দামে লবণ বিক্রি করতাম না। সকালে একজন ৫২ কেজি লবণ কিনে নিয়ে যায়।
লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির জানান, দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। কি কারণে হঠাৎ লবণ এমন চাহিদা হলো সে বুঝতেছি না। আমাদের কাছে পর্যপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে।
অন্যদিকে, গুজবে সিলেট ও হবিগঞ্জেও মুদি দোকানে ভিড় জমাতে থাকেন। এ সুযোগে অতিরিক্ত দামে ব্যবসায়ীরা লবণ বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
লবণের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা কমবেশি ১ লাখ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, লবণের মজুত আছে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকট হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকটের গুজব রটিয়ে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে লবণের কোন ঘাটতি নেই। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি লবণ মজুদ রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি রেকর্ড পরিমাণ ১৮.২৪ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে লবণের মজুদের পরিমাণ ৬.৫০ লাখ মেট্রিকটন। লবণসংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য বিসিক’র প্রধান কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৫৭৩৫০৫, ০১৭১৫২২৩৯৪৯।
এদিকে দেশে লবণের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে তাই পুলিশ সদস্যদের দোকানে দোকানে গিয়ে তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) মনিরুল ইসলাম ওয়ারলেসে পুলিশ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন। নির্দেশনা পেয়ে থানা এলাকার পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে লবণের মজুতের খোঁজখবর নিচ্ছেন।
ডিএমপির এশাধিক ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মুগদা এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা জানান, বিকেলে দোকানে দোকানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশি দামে লবণ বিক্রি করায় কয়েকজনকে আটক করে।
এ বিষয়ে মুগদা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, লবণ নিয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রচারণা চালাচ্ছি। এছাড়াও কেউ অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রি করছে কি না- সে বিষয়ে নজর রাখছি। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান