সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন ধর্মঘট, অচল সারাদেশ
ইসমাঈল ইমু : সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের পথ বেছে নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। অবশ্য এই আন্দোলনে সায় নেই তাদের নেতাদের। পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। চলছে অঞ্চলভিত্তিক ধর্মঘট। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
ঢাকার প্রধান প্রধান বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের অপেক্ষারত দেখা গেছে। একই ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকামুখী যাত্রীরাও। এছাড়া ঢাকার প্রবেশপথ আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, কাঁচপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানবাহন চালকদের নাজেহাল করে গাড়ির চাবি কেড়ে নেয় শ্রমিকরা। রাজধানীতে ট্রাক চালানোর দায়ে চালককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের নির্দেশনা ছাড়াই শ্রমিকরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। এমনকি রাজধানী থেকে যে সকল গাড়ি ছেড়ে গেছে, সেগুলো আর ঢাকায় ফিরছে না। ফলে সারাদেশেই পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের দু’টি ধারা সংশোধনের দাবিতেই তারা গাড়ি চালানো থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। এর অন্যতম হলো সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো চালক দোষী হলেও তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। জরিমানার হার কমানোর দাবিও তাদের। এই দুই দাবি মানলেই কেবল সড়কে গাড়ি চালাতে নামবেন চালকরা।
যদিও তাদের এই দাবিকে অযৌক্তিক মনে করছেন মালিক পক্ষ। কেননা আইনটি বাস্তবায়নের আগে মালিক পক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের অবগত করেই মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষাধীন রয়েছে। এখন এভাবে মানুষ জিম্মি করে দাবি আদায় করা যৌক্তিক নয়। শ্রমিক নেতা এবং শ্রমিকদের অধিকাংশই আইনের প্রতিটি ধারা সম্পর্কে অবগত নন। না জেনেই তারা আন্দোলন করছেন। অনেকে গুজবে সাড়া দিয়েই মাঠে নেমেছেন বলেও জানা গেছে। পরিবহন সেক্টরে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল দুপুরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক করার কথা থাকলেও শ্রমিক নেতারা একত্রিত না হওয়ায তা হয়নি। তবে রাত সাড়ে ৯টায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্মঘটের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ধর্মঘটে যাওয়ার মতো কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সকালে কিছু গাড়ি বের করা হয়েছিলো বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার জন্য কিন্তু আমি খবর পেয়েছি ট্রাক শ্রমিকদের জন্য গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে আমাদের বাসের টিকিট কাউন্টার খোলা আছে। টিকিট বুকিংও হচ্ছে। কিন্তু জেলা থেকে শ্রমিকরা আর গাড়ি নিয়ে ফিরতে দিচ্ছে না, গাড়ি ভাঙচুর করছে।
উল্লেখ্য, নতুন সড়ক আইন গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে আইন নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে কর্তৃপক্ষ। ফলে দুই সপ্তাহ শিথিল ছিল নতুন আইনের কার্যকারিতা। পরে গত সোমবার থেকে আইন কার্যকর হওয়ার পর ৯ দফা দাবিতে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন করছেন শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ৬টা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়।