তুরস্ককে দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান অর্থমন্ত্রীর
সাইদ রিপন : বাংলাদেশে বাণিজ্যসহ ১৫টি লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন খাতে তুরষ্ককে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ-তুরস্কের পঞ্চম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন সভায় মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এছাড়া গত মঙ্গলবার তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলির স্পিকারের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তিন দিনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য-বিণিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, শিপ বিল্ডিং, শিল্প, কর্মসংস্থান, নৌ-পরিবহন, কৃষি, শিক্ষা, নগরায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও বিমান পরিবহন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি-ট্যুরিজম, ডেভলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পাট-টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন করে আর কী কী খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায় সেসব বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দেশ। বাংলাদেশের মতো তুরস্কও জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থন হয়েছে এবং এ বছর ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি, যা ২০২৪ সালে দাঁড়াবে ১০ শতাংশ এবং সেটা অব্যাহত থাকবে।
এদেশে স্বল্প ব্যয়ে জনশক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং আমাদের শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশের সুবিধা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। অর্থমন্ত্রী তুরস্ককে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানান। তুরস্ক বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে জমি চাইলে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের মতো তুরস্কও চার মিলিয়ন শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ অনেকটাই হুমকীর মুখে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরাতে তুরস্ককে সহায়তা করার অনুরোধ করেন তিনি। কক্সবাজারের আশেপাশ এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আমাদের সামাজিকভাবে ও জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। সামাজিক বন্ধনসহ যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা ডলার বা টাকার অংকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শরনার্থীদেরকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার ইতিহাস তৈরি করেছেন। মানবিক উদারতার পরিচয়ে এ দুই রাষ্ট্রনায়কের শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া উচিত। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব