পেঁয়াজের দাম কমে প্রতিকেজি ১৪২ থেকে ১৫২ টাকা
লাইজুল ইসলাম : নিয়ম করেই যেন প্রতি দিন কমছে পেঁয়াজের দর। গেলো কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বুধবার ১৪২ থেকে ১৫২ টাকায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন ব্যবাসায়ীকে জরিমানা করেছেন।
বুধবার থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ পাইকারি ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ দোকান গুটিয়ে শুয়ে-বসে আছেন। যারা পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরাও অলস সময় পার করছেন। ক্রেতা না থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি তাদের। এসময় বিক্রেতারা বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা বাড়েনি। সকালে কিছু ক্রেতা আসলেও দুপুরের দিকে ক্রেতাশুন্য হয়ে পড়ে বাজার। তাই বেশির ভাগ দোকনই বন্ধ।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মোহম্মদ লিটন বলেন, পাবনার পেঁয়াজ কেনা আছে ২৩০ টাকায়। কিন্তু বাজার কমে যাওয়ায় এখন ১৫২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪২ টাকা দরে। মিয়ানমারের ২১০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে।
এদিকে খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, দেশি পেঁয়াজ কয়েক ধরনের আছে। প্রকার ভেদে ১৫২ থেকে ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মিয়ানবারের পেঁয়াজটা কম চলে তাই কেনা হয়নি। মিশরের পেঁয়াজ ১৩০ টাকায় বিক্রি করছি। এসময় সাবেক সরকারি কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ বণিক বলেন, আমাদের দেশে কোনো কিছুর ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই। পেঁয়াজের দাম বাড়লো, এখন কমছে। আমরা অল্প করে কিনছি।
বাজার তদারকিতে আসেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদ আরিফিন। তার কাছে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, পেঁয়াজ ব্যবসায়ী যা দাম লিখে রেখেছেন তার থেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন। অভিযোগের সত্যতা মেলায় তিন পাইকারি ব্যবসায়ীকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসভি ৩৮০২ মিসরের কায়রো থেকে জেদ্দা হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছালেও কাক্সিক্ষত পেঁয়াজ আসেনি। এই বিমানে করেই পেঁয়াজ আসার কথা ছিলো। বিমানবন্দর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে পেঁয়াজ আসার খবরে প্রস্তুত রাখা হয়েছে কর্মীদের। আনলোড করার জন্য সব কিছুই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। বিমানবন্দরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক রতন কুমার সরকার জানিয়েছেন, তার দল ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত রয়েছে।
কখন পেঁয়াজ আসবে সেই বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও জানা গেছে কার্গো প্লেনে করেই পেঁয়াজ আসবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিদিন যাত্রীবাহি ও কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আসবে।
এদিকে, আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য চার্জ জনস্বার্থে মওকুফ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। আকাশপথে পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা চার্জ প্রদান করতে হয়। কিন্তু পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে সারাদেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে লবণের সংকট হতে যাচ্ছে। সবাই লবণ কিনতে শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকানে ভিড়ও জমান ক্রেতারা। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার সরকারের সব প্রশাসন এক সঙ্গে কাজ করে। গুজব সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার ও অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হয়।
বুধবার কারওয়ান বাজারে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, গুজবে কান না দেয়া ভালো। আমি লবণ কিনিনি। পরে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইলে এসএমএস, টেলিভিশন ও পত্রিকাতে গুজব বিরোধী প্রচার দেখেছি।
বাজার করতে এসে গৃহিনী শাহনাজ বেগম বলেন, এসব সরকারের দুর্দশার প্রমাণ। তারা কোনো ভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবে আমরাও যাতে গুজবে কান না দেই সেজন্য সচেতন থাকতে হবে।
সকাল থেকে কারওয়ান বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাসুম আরেফিন। প্রত্যেক দোকানে উন্মুক্ত স্থানে লবণ রাখতে বলেন তিনি। নির্ধারিত খুচরা দামে বেশিতে লবণ বিক্রি করতে বলেন। দুই কেজির বেশি লবণ বিক্রি না করতে হুশিয়ারি দেন তিনি।
এসময় কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, আমাদের কোনো দোষ নেই। ক্রেতারা এসে জোর করে কিনে নিয়ে যায়। মঙ্গলবার একেক জন দুই থেকে পাঁচ বা দশ কেজিও লবণ নিয়েছেন। কিন্তু আমরা দাম বাড়াইনি। আরেক ব্যবসায়ী মোহম্মদ শাহবউদ্দিন বলেন, আমরা লবণ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছি। এক বা দুই কেজির বেশি লবণ বিক্রি করছি না। অযথা বিক্রি করে দোকান খালি করার প্রয়োজন নাই বলে জানান এই ব্যবসায়ী। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান