দীর্ঘতম ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে সিঙ্গাপুরে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ দুই অস্ট্রেলীয় ধনকুবেরের
নূর মাজিদ : অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে বিশাল শুস্ক অঞ্চল। প্রায় রুক্ষ, মরুসম আউটব্যাকখ্যাত এই অঞ্চলে সৌরতাপ এবং বিকিরণ খুবই বেশি। ক্ষেত্রবিশেষে পথ হারানো পথিকের জন্য প্রাণঘাতিও বটে। তবে সৌর বিকিরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদিত দূষণমুক্ত বিদ্যুতের চাহিদাও এখন বিশ্বব্যাপী। সেই চাহিদার পালে হাওয়া লাগিয়েই দেশটির দুই দুই বিখ্যাত বিলিয়নিয়ার মাইক ক্যানন এবং আন্ড্রু ফরেস্ট এই উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দেশটি থেকে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ, সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্র তলদেশের বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে পরিবহনে বিনিয়োগ করছেন তারা। খবর : ব্লুমবার্গ।
বিশ্বের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো একে একটি খুবই সুদূরপ্রসারী এবং উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের আখ্যা দিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথমেই কয়েক কোটি ডলার প্রাথমিক কাজ শুরুর জন্য বিনিয়োগ করা হবে। নিজেদের অর্থ বিনিয়োগের পাশাপাশি তারা পুঁজিবাজার থেকেও লগ্নি যোগার করবেন। ২০২৩ সালের মধ্যে এসব বিনিয়োগ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের সহযোগী ও মূল ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সান কেবল। কো¤পানিটির আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা ডাভিড গ্রিফিন বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় প্রথমেই স্থাপন করা হবে একটি ১০ গিগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। উৎপাদিত বিদ্যুৎশক্তি সংরক্ষণে একটি ব্যাটারি স্থাপনাও থাকবে এর আওতায়।’ নির্মাণ শেষে এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে, বলেই দাবী করে বিবৃতিটি।
এই প্রকল্পকে জোরালো সমর্থন দিচ্ছেন নবায়নযোগ্য শক্তির বৈশ্বিক আন্দোলনকর্মীরা। দূষণমুক্ত জ্বালানির স্বপক্ষে আন্দোলনকারী সংস্থা ক্যানন ব্রুক্সের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেয়ার মতো উদ্দীপক এক প্রকল্প। একবার যদি এটা সঠিকভাবে কার্যকর করা যায় তাহলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য নতুন এক রপ্তানি উৎস তৈরি হবে। স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি এটা আমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখার সহায়ক হবে।’ উলে¬খ্য, আলোচিত প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে ক্যানন ব্রুক্সের বেসরকারি বিনিয়োগ অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান গ্রোক ভেঞ্চার্স। স্কোয়াড্রন এনার্জি নামক আরেক প্রাকৃতিক স¤পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কো¤পানির সঙ্গে যৌথভাবে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল ঠিকাদার সান কেবলের মতে, আলোচিত মাত্রায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ সিঙ্গাপুরের মোট চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ পূরণ করবে। ফলে কমবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নগর রাষ্ট্রটির নির্ভরতা। কেন্দ্র ও ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ মিলিয়ে মোট খরচ ২ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি বা এর কিছু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ২০২৭ সাল থেকে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করছেন সংশি¬ষ্টরা।