কলকাকলিতে মুখরিত বাইক্কা বিল
বাংলানিউজ : কিচিরমিচির ডাক আর জলকেলিতে মুখরিত হবিগঞ্জের বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম। এটি মূলত দেশি প্রজাতি মাছের প্রজননকেন্দ্র এবং সরকার ঘোষিত মৎস্যসম্পদের নিরাপত্তার স্থান। একশত হেক্টর আয়তনের এ বাইক্কা বিল দেশের একটি সংরক্ষিত সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক জলাভূমি। প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটের প্রসিদ্ধ এ জলাভূমিতে এসে গেছে পরিযায়ী পাখিরা। পানিতে তাদের ভেসে বেড়ানো, ডাঙায় একত্রে চুপচাপ বসে থাকা কিংবা হঠাৎ একত্রে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মধুময় এ দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের বরফজমা দেশগুলো থেকে কিছুদিন এশিয়ার বিভিন্ন জলাভূমি সমৃদ্ধ দেশগুলোতে নানা জাতের পরিযায়ী পাখি ফিরে আসে। আর এই এশিয়ার অন্যতম জলাভূমি সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ। তাই এখানে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পরিযায়ী পাখি আসে। কয়েক মাস অবস্থান করে আবার ফিরে যায় আগের ঠিকানায়।
বাইক্কা বিলের অবস্থান নেওয়া পরিযায়ী পাখিগুলো হলো- কয়েক প্রজাতির সৈকতপাখি, এক প্রজাতির খয়রা কাস্তেচরা, এক প্রজাতির বড় পানকৌড়ি, এক প্রজাতির পাতি-কুট এবং হাঁসের মধ্যে গিয়িরা হাঁস ও তিলা হাঁস।
বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ইনাম আল হক বলেন, ‘বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেখলাম কয়েক প্রজাতি চলেও এসেছে। এগুলো হলো- তিলা হাঁস, পিয়াং হাঁস, বড় পানকৌড়ি এবং খয়রা-কাস্তেচরা। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখলাম তিলা হাঁস।’
‘অনেক বেশি এসেছে খয়রা কাস্তেচরা। এক ঝাঁকে আমি ৩৬টি গুনেছি, অপর ঝাঁকে আমি ১৭টাকে দেখেছি। এরা এককালে বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। বছর ছয়েক আগে গে�াসি-আইভিসদের বাংলাদেশে প্রথম আমরা পেলাম টাংগুয়ার হাওরে। তারপর আস্তে আস্তে এদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে থাকলো। বাইক্কা বিলে গত বছর (২০১৮ সালে) এদের একশ’র উপরও পাওয়া গিয়েছিল। বাইক্কা বিল ছাড়া বাংলাদেশে এতো বড় সংখ্যায় আর ছিল না। এবার তো ইতোমধ্যে ৫৩টি গে�াসি-আইভিস চলে এসেছে; আমি আশা করছি গত বছরের থেকে এবার হয়তো এদের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
পরিযায়ী পাখি প্রাপ্তির বিষয়ে ইনাম আল হক আরও বলেন, অনেকগুলো বড়-পানকৌড়ি খুঁজে পেলাম। এদের সংখ্যা প্রায় সত্তরের উপরে হবে। এরা পরিযায়ী পাখি। তবে ছোট-পানকৌড়ি সেই তুলনায় কম। এছাড়াও হাঁসের মতো আরেকটি জলচর পাখি পাতি-কুটও দেখলাম এসেছে অনেক।
বিলের স্থানীয় পাখি সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, অনেকগুলো ধলা-বালিহাঁস দেখলাম; ওরা আপন মনে খাবার খাচ্ছে। এ হাঁসগুলো বাইক্কা বিলের বাসিন্দা। এছাড়াও ছোট শরালি হাঁসগুলো দেখলাম; এরাও তো আশপাশের বিলগুলোতে আছে। এছাড়াও অনেক নেউপিপিও দেখেছি। এগুলো আমাদের বিলের আবাসিক পাখি এবং গো-বকও দেখেছি। এদের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ’রও বেশি হবে।
‘মাছমুরাল, বড়-গুটি ঈগল, মেটেমাথা-টিটি, বন-বাটান, সবুজ-বাটান, টেমিঙ্কের-চাপাখি, মেটে খঞ্জন, হলদে খঞ্জন, ধলা খঞ্জন দিনব্যাপী বাইক্কা বিলে অবস্থান করে’, যোগ করেন তিনি।
শীত মৌসুমে দেখা পাওয়া এসব পাখিদের মনোমুগ্ধকর রূপ তাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে বলেও জানান দেশবরেণ্য পাখি-গবেষক ইনাম আল হক। শোভন দত্ত