পর্যটন কৃষি শিল্প ও এসএমই খাতে বিনিয়োগ করবে তুরস্ক, বললেন অর্থমন্ত্রী
সাইদ রিপন : বুধবার তুরস্কের আঙ্কারায় দেশটির সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী মেহমেত নুরী এরসয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দিকী এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মনোয়ার আহমেদ। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের প্রথম দিকে তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরের আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করবেন। পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্যে কক্সবাজার সফর করবেন এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য পাঠাবেন। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প, এসএমই খাতে তিনি আগ্রহ ব্যক্ত করেন। মুস্তফা কামাল বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে সুন্দর ও শান্তিময় করাই আমাদের দায়িত্ব। তুরস্ক শিল্প সমৃদ্ধ একটি দেশ, ওইসিডি, জি ২০’র মতো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। আর আমরা শিল্প সমৃদ্ধ হওয়ার পথে হাঁটছি, জি ২০’র সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
‘বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সাত শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং এবছর আট দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা আগামী বছর আট দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে আট দশমিক ৩০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি। যা ২০২৪ সাল নাগাদ দাঁড়াবে ১০ শতাংশ। একইসঙ্গে সেটা অব্যাহত থাকবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সূচক অনুসারে, দ্রæততম সময়ে দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের বিশ্ব অর্থনীতির বড় সূচকগুলোয় একে একে প্রশংসনীয় অবস্থানে চলে এসেছি আমরা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ২০১৯ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক অনুসারে, উচ্চপ্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৫টি দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
‘২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। বাংলাদেশ এশীয় প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রæততম প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখবে। স্পেক্টেটর ইনডেক্স ২০১৯ অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ২৬টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ,’ যোগ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। সুযোগ রয়েছে তরুণ ও বর্ধমান জনসংখ্যার সুবিধা নেওয়ার। কেননা বর্তমানে বাংলাদেশে জনমিতিক লভ্যাংশের ‘ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ট’ সুযোগ বিদ্যমান।
‘আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। চীন, ভারত এবং এশিয়ার অন্যান্য ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে। ২০৩২ সালে পৃথিবীতে এক নম্বর দেশ হবে চীন, দুই নম্বর হবে আমেরিকা, তিন নম্বর হবে ইন্ডিয়া, চার নম্বর হবে জাপান এবং পাঁচ নম্বর হবে জার্মানি। চীন, ভারত ও জাপান, এই তিনটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মাঝে থাকবে বাংলাদেশ।’ মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গেøাবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। সুতরাং কৌশলগত কারণেই বাংলাদেশকে এড়িয়ে বিশ্বের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসবে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে তার মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।
এরপর বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সাহায্য সংশ্লিষ্ট যৌথ ইশতেহার সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং তুরস্কের পক্ষে সই করেন সেই দেশের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী মেহমেত নুরী এরসয়। তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী মেহমেত নুরী এরসয় বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক তারকা। তুরস্ক ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। যদিও দু’দেশের বাণিজ্য পরিসর ততটা ভালো নয়। তবে যাতে করে বাণিজ্য পরিসর আরও বাড়ানো যায়, সেটাই এখন আমাদের প্রচেষ্টা। সাদেক আলী। রেজা