আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রত্যয় অর্থনীতিতে গতি আনতে পারে, বললেন ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বিশ্বজিৎ দত্ত : শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার করে দেশের অর্থনীতির সংকটগুলোর সমাধান করা যাবে না। এরজন্য প্রয়োজন রয়েছে রাজনৈতিক কমিটমেন্টের। তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সরাসরি নির্দেশ দিয়ে অর্থনীতির সংকটগুলোকে দূর করতে হবে। কারণ দেশের অর্থনীতি এখন সাধারণ নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে না। এটি সম্পূর্ণ অর্থেই রাজনৈতিক অর্থনীতি। রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পর্যায়ের ধাক্কা এখন অর্থনীতিকে বেগবান করতে পারে। দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতির উপর আলোচনায় গতকাল তিনি এ কথা বলেন।
গত বুধবার আঙ্কটাডের রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ তিন ধরনের ঘাটতির ভিতরে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজস্ব আয় জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ঘাটতি। সেই সঙ্গে বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে যাওয়ার বিষয়েও তিনি বক্তব্য দেন। গতকাল অর্থ পাচারে বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশে অর্থপাচার প্রতিরোধে যে আইনগুলো রয়েছে তা ঠিক মতো প্রয়োগ হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। যেমন অর্থপাচারের বেশির ভাগই হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানির মাধ্যমে। বিশেষ করে আমদানির বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। ১০ টাকার জিনিস যাতে ১০০ টাকায় কিনে দেশে না আনা হয়। তিনি বলেন, আঙ্কটাডের রিপোর্ট অনুযায়ি দেশ থেকে ৫০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে আয় বৈষম্যের কারণে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে গরীব মানুষ উপকৃত হতো সেখানে বাজেটের বরাদ্দ খুবই কম। অন্যদিকে এক ধরনের মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ জড়ো হয়েছে। তারা বাজারকেও অস্থির করে তুলছে। ফলশ্রæতিতে সাধারণ মানুষ তার সঞ্চয় হারাচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। সাধারণ মানুষের সঞ্চয় সেখান থেকে চলে গেছে। শেয়ার বাজার থেকেও সাধারণ মানুষের সঞ্চয় চলে গেছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণের কাছে পৌঁছে না। এই অবস্থা থেকে বের হতে চাইলেও রাজনৈতিক প্রত্যয় দরকার।
রাজস্ব আয়ের বিষয়ে বলেন, দেশে মাত্র ১৮ লাখ মানুষ কর দেয়। বাকিরা দেয় না। আয়যোগ্য করের অনেক লোক অনেক কোম্পানি থাকলেও তারা ফাঁকি দেয়। এখানে কর প্রশাসনের সংস্কার জরুরি। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কিন্তু আবার একই কথা বলতে হয়। প্রশাসনের দক্ষতার চেয়েও প্রয়োজন ধাক্কা। কারণ একটা পর্যায়ে কর বিভাগও স্থবির হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ‘বৈদেশিক উন্নয়ন সাহায্যে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে। আবার যে পরিমাণ টাকা ঋণ পাচ্ছি তা ব্যবহার করতে পারছি না। দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সাড়ে ৩৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভশীল। তাই উন্নয়ন কর্মসূচি এখনো বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
এ বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, সাশ্রয়ীভাবে বৈদেশিক ঋণ ব্যবহারে বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। একদিকে সাশ্রয়ীভাবে ঋণ নিতে হবে, অন্যদিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ঋণের যৌক্তিকতা, ব্যবহার ও দায়দেনার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হবে। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা চাই। দেশে কর না বাড়লে বিদেশিরা টাকা দিতে উৎসাহী হবে না। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান