বাজারে আসছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ, দাম স্বস্তি আশার সম্ভাবনা
অর্থনীতি ডেস্ক : বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার চড়া থাকায় এবং ভালো ফলনের কারণে এবার ন্যায্যমূল্য পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পেঁয়াজ চাষে নানাবিধ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, ন্যায্যমূল্য পেলে এ বছর চাষিরা লাভবান হবেন।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রাজবাড়ীর ৫ উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর দুই লাখ ৮১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন তারা।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে চড়া দাম থাকায় এবার আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা। দাম বাড়তি থাকার সময়টাতেই পেঁয়াজ দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন চাষিরা। তারা বলছেন আমদানি নয়, সরকারি সহায়তা পেলে দেশেই বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব।
জেলা সদরের কোলারহাট গাবলা গ্রামের পেঁয়াজ চাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ বুনতে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর ফসল তোলার সময় বৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে আমার আড়াই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। ঢাকার শ্যামবাজারে পেঁয়াজ নিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে। আমরা যে ট্রাকে করে পেঁয়াজ নিয়েছি, তার ভাড়া দেয়াই কষ্ট হয়েছে। এ বছর পেঁয়াজের বাজার ভালো। ন্যায্যদাম পেলে কৃষক লাভবান হবেন। স্থানীয় পেঁয়াজ চাষি রতন শেখ বলেন, সার, পেঁয়াজের বীজ ও শ্রমিকের যে মূল্য, এতে অনেক খরচ হয়। এখন কিং জাতের আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগিয়েছি। সব ঠিক থাকলে সাত দিনের মধ্যে এই পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের পর ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। এখন বাড়তি দাম পেতে অনেকেই পেঁয়াজ তোলা শুরু করেছেন। অনেকে অতিরিক্ত যতœও নিচ্ছেন। এক সপ্তাহ বা দশ দিনের মধ্যেই পুরোপুরিভাবে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে তোলা সম্ভব হবে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর খান বলেন, ভালো দাম পাওয়ার আশায় রাজবাড়ী সদরের পেঁয়াজ চাষিরা আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছেন। আগাম চাষ করায় এই পেঁয়াজ জমি থেকে উঠিয়ে আবার আরেকটি ফসল চাষ করা সম্ভব হবে। এতে কৃষক দুই ফসলের চাষাবাদ করতে পারবেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. বাহাউদ্দিন শেখ জানান, রাজবাড়ী জেলায় প্রতি বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়। দেশের শতকরা ১৩ ভাগ পেঁয়াজ রাজবাড়ী থেকে জোগান দেওয়া হয়। পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তারা সব সময় চাষিদের নানাবিধ পরামর্শ দিচ্ছেন। পেঁয়াজের দুটি জাত তাহেরপুরি ও কিং পেঁয়াজের মধ্যে কিং জাতের ফলন বেশি। এ বছর কৃষকরা কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে অনেক প্রতীক্ষা আর কাঠখড়ি পোড়ানোর পর দীর্ঘপথ পেরিয়ে শুক্রবার তুরস্ক থেকে বিমানে ১১ টন ৪৫৩ কেজি পেঁয়াজ ঢাকায় এসেছে। মেসার্স তাজ ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি বিমানে এই পেঁয়াজ আমদানি করেছে।
শুক্রবার ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে পেঁয়াজ নিয়ে উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ঢাকা কাস্টম হাউজের সহকারী কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকার মাটিতে পেঁয়াজ নিয়ে একটি উড়োজাহাজ অবতরণ করেছে। পেঁয়াজের চালানটির দ্রুত শুল্কায়নসহ অন্যান্য কাজ শেষে করে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।
অপরদিকে পাইকারি বাজারে প্রতিদিন কমছে দেশি-বিদেশি পেঁয়াজের দাম। কিন্তু রাজধানীর খুচরা বাজারে এর প্রভাব তেমন পড়ছে না। মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। শান্তিনগর, যাত্রাবাড়ী, কাওরান বাজার ও কোনাপাড়া খুচরা বাজারে পেঁয়াজের এমন দাম লক্ষ করা গেছে।
কাওরান বাজারের পাইকারি বাজারে শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও মিশরের পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরে।
কোনাপাড়া বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে, তবে দাম কমেনি তেমন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম ক্রমেই কমবে।
জানতে চাইলে মাতুয়াইলের মুসলিম নগরের খুচরা ব্যবসায়ী সামছু মিয়া বলেন, ‘আমরা এক সপ্তাহ আগে ২১০ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছি। এখন চাহিদা কমে গেছে। কারণ সবজির দোকানে নতুন পাতাসহ পেঁয়াজ উঠে গেছে। দাম কম বলে সেগুলো কিনছেন ক্রেতারা। পুরনো পেঁয়াজ কিনছেন না। এমন অবস্থায় পচে যাওয়ার ভয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমিয়ে বিক্রি করছি। তাও তো ঠিক মতো বিক্রি হচ্ছে না। বেশি ক্ষতিতে তো আর বিক্রি করতে পারি না।’ জিয়ারুল হক