এক দশকে ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
নূর মাজিদ : ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় নাগাদ মেয়াদে এই স্ফীতি এসেছে দেশের অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে। এই উন্নতির সুবাদে ২০১৭ সালের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে চলতি অর্থবছর শেষে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির আশা করছে সরকার ও এডিবির মতো নানা দাতা সংস্থা। বাংলাদেশের এহেন সাফল্যের বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ায়; ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার মতো প্রতিবেশী অর্থনীতিগুলো সম্প্রতি তাদের জিডিপিতে উলে¬খযোগ্য পতন লক্ষ্য করছে। এরপরেও বাংলাদেশ উন্নতি করছে। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম শীর্ষ বড় অর্থনীতি হবে, পূর্বাভাস এইচএসবিসি ব্যাংকের।
রপ্তনির পরিমাণ এবং উৎসেও আসছে বৈচিত্র্য। এটা ইতিবাচক প্রণোদনা দিচ্ছে প্রবৃদ্ধির পেছনে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি সাড়ে ৪ শতাংশ বাড়ে। চলতি অর্থবছর শেষে যা ১০ দশমিক ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার অনুমান করা হচ্ছে। শুধু শিল্পোৎপাদনেই নয়, কৃষিতেও উন্নতি চোখে পড়ার মতোই। বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ ধান উৎপাদক। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, আম উৎপাদনে চতুর্থ, সবজিতে পঞ্চম। মিঠাপানির মাছ চাষের দিক থেকেও দেশ এখন পুরো বিশ্বের মাঝে চতুর্থ। তবে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সাফল্য। এক্ষেত্রে অবশ্য সরকারি উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ব্যাপক বাস্তব প্রয়োগ প্রয়োজন। অনেক পিছিয়ে থাকার পরেও অতি-সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার মতো তথ্যপ্রযুক্তিখাতে উন্নত দেশে সম্প্রতি ১২টি শিল্প রোবট রপ্তানি করে অনেককেই তাক লাগিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারতে চারটি পণ্য পরিবাহী জাহাজও রপ্তানি করে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মেধা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলার সক্ষমতা এবং উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
গার্মেন্টস পণ্য বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি উৎস। এইখাতেও দিন দিন উন্নতি আসছে। প্রচলিত বাজার যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত এবং চীনের মতো অপেক্ষাকৃত নতুন বাজারে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০১৮ সালে বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বিগত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর শেষে এই প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হান্স ট্রিমার বলেন, নানা সূচকের উচ্চ অবস্থানের প্রেক্ষিতে আমরা দেখছি দক্ষিণ এশিয় অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ভালোই করছে। বিশেষ করে, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার তুলনায় তো বটেই। আমরা এই অবস্থা শিল্পোৎপাদন এবং রপ্তানি উভয়ক্ষেত্রেই দেখতে পাচ্ছি।
সবচেয়ে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে শ্রমবাজারে। প্রতিবছর পাঁচলাখ শিক্ষার্থী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্নাতক পাশ করে স্থায়ী কর্ম সংস্থানে যুক্ত হচ্ছে। তবে তাদের বাবা-মার সময়ে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ছিলো, এখন সেই অবস্থা অনেকটাই বদলেছে। ফলে নতুনেরা প্রচলিত চাকরির বাজারে আসছেন না, বরং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এক চ্যালেঞ্জিং এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত বাজারে প্রবেশ করছেন। নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে রাখতে দেশব্যাপী ৮ হাজার ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সক্রিয় অবদান রাখছে। পাশাপাশি মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রযুক্তিগত শিক্ষা বাড়াচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি বা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিক এখন ইন্টারনেট সংযোগের আওতায়। বাংলাদেশের এমন অর্জনগুলো থেকে এখনও বহু পিছিয়ে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের অনেক রাজ্য।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদেরও চোখ এড়াচ্ছে না বাংলাদেশের এসব উন্নতি। ২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। বেশিরভাগ বিদেশি পুঁজি আসছে দেশের বিদ্যুৎ, খাদ্য এবং টেক্সটাইল খাতে। বিনিয়োগের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়া। অতি সম্প্রতি সৌদি আরবের এনার্জি জায়ান্ট আকওয়া পাওয়ার ৩৬শ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি গ্যাসচালিত বিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি করে। এসব কিছুই তুলে ধরছে বিশ্বের বিনিয়োগকারী সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের অব্যাহত আকর্ষণকে।