বেসরকারি বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ
সাইদ রিপন : নানা ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের পরেও বেসরকারি বিনিয়োগসহ কিছু ক্ষেত্রে দেশ এখনও দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। সরকারের প্রত্যাশিত বেসরকারি বিনিয়োগের কাঙ্খিত অবস্থান অর্জন করতে পারেনি। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন, জবাবদিহিতা এবং জাতীয় সঞ্চয় হারে দুর্বলতা রয়েছে। এছাড়া জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে অনেক পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ (১৪৬টি দেশের মধ্যে ১৩৭ তম)। আমদানি ও রফতানি, রেমিটেন্স এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে অনেকটা দূরে রয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি অবহিতকরণ ও প্রতিবেদনের মোড়ক উম্মোচন করে। জিইডির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির ৩১ শতাংশ। কিন্তু অর্জন হয়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল জিডিপির ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। তবে সরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে। সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল জিডিপির ৭ দশমিক ১ শতাংশ আর অর্জন হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়ের লক্ষ্য ছিল জিডিপির ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ, অর্জন হয়েছে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে ২০১০ সালে ৩৬ দশমিক ৯৭ থেকে অবনতি হয়ে ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক শূণ্য ৩ শতাংশে। এছাড়া মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্য অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। কেননা সেসময় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হওয়ায় একটু উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। ফলে লক্ষ্য অর্জিত না হলেও ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকারের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে দুর্বল সমঅবস্থানে রয়েছে কম্পোডিয়া ও ইথিওপিয়া। কিন্তু বাংলাদেশের পেছনে অতি দুর্বল অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও নেপাল। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে সার্বিকভাবে প্লাস মাইনাস আছে। প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে আমি মার্ক দেব ৬০-৭০ ভাগ। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার সময় ভয়ঙ্কর কোনো ব্যর্থতা নেই। হতাশা বা লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অনেক ভাল করছি আমরা। মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে পেরেছি। গর্ববোধ করার মতো মূল্যস্ফীতি রয়েছে। রেমিটেন্স, ম্যানুফ্যাকচারিং, সেবাখাত, অবকাঠামো উন্নয়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন, গড় আয়ু, দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি, মানব উন্নয়ন এবং নারীদের অংশগ্রহণসহ অনেক ক্ষেত্রেই অর্জন উল্লেখযোগ্য। গত ১১ বছরে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে কর জিডিপি ভালো হয়নি। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা রয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, যে কোনো পরিকল্পনার মূল্যায়ন জরুরি। তাহলে এর অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও ভালো প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এইচ টি ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর মেধাবীদের নিয়ে এসে পরিকল্পনা কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন কাজে লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারও মেধাবীদের কাজে লাগাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ভালো করছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে থাকলে ভালো হতো। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। কিন্তু আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীতে বাংলাদেশ গর্ব করার মতো দিক রয়েছে। এর প্রতিফলন প্রতিবেদনে থাকলে ভালো হতো।
ড. শামসুল আলম বলেন, সুশাসনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪ দশমিক ৭৬। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কমানোর ক্ষেত্রে ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ৯ দশমিক ৯৫ এবং ২০১৬ সালে অগ্রগতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশে। মানসম্মত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ২২ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং সেটি বেড়ে ২০১৬ সালে হয়েছে ৩০ দশমিক ৭৭ শতাংশ।