আমাদের বিশ্ব • আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
৪০ লাখ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত মোকাবেলার ঘোষণা দিলেন চীনের ব্যাংকিং ও বীমাখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান গুয়ো শুকিং
নূর মাজিদ : ব্যাংকিং ও বীমাখাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা চায়না ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশন প্রধান এবং দেশটির শাসকগোষ্ঠী কম্যুনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও ব্যাংকার গুয়ো শুকিং। দেশটির ব্যাংকিংখাত এককভাবে শুধু এশিয়ার সবচেয়ে বড় নয়, বরং বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের চাইতেও এর ব্যবসার পরিধি দ্বিগুণ। এর সঙ্গে দেশটির বীমাখাত তো আছেই। সব মিলিয়ে গুয়ো শুকিং এক মহাগুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং এক পদে আছেন, যেখানে তার চুল পরিমাণ ভুল সিদ্ধান্ত চীনের জন্য ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনের আগামী দিনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে যতো অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে এক বিপুল চাপ মোকাবেলা করছেন তিনি। খবর : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, বøুমবার্গ।
হংকংয়ের পশ্চিমা সমর্থিত গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন এই পরিস্থিতি আরও অবনতির সুযোগটাই বাড়িয়েছে। তবে বেশিদিন নয়, মাত্র দু মাস হলো তিনি পৃথিবীর আর্থিকখাতের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এই দায়িত্ব নেন। তবে এই সময়ের মাঝেই তিনি যে অঙ্গীকার করেছেন, তা পূর্বের কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রধান দেয়ার কথা ভাবতেও পারেন নি।
গত এক দশকে চীনের ব্যাংকিংখাতে ৪০ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ উদ্বৃত্ত (স¤পদ) হিসেবে জমা হয়েছে। ফলে মুদ্রামান চাইলেও বৈধ প্রক্রিয়ায় খুব বেশি শিথিল করার সুযোগ পাচ্ছে না চীন। যুক্তরাষ্ট্র এই সুযোগটা নিয়েই মুদ্রার দর ধরে রাখতে চীনের ওপর বাড়তি চাপ বাড়িয়েছে। অথচ সা¤প্রতিক বাণিজ্য সংঘাতের ডামাডোলে পড়তি শিল্পোৎপাদন এবং মুনাফা, চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে উদ্যোক্তাদের মাঝে। বাণিজ্যিক আস্থা ধরে রাখতে প্রণোদনা ও কর রেয়াতের পাশাপাশি মুদ্রামান আরো অবমুল্যায়ন করার কোন বিকল্প নেই। প্রয়োজন আছে প্রকৃত তারল্য সৃষ্টি, চলতি ঋণের সরবরাহ গতি বৃদ্ধি, নতুন ঋণ ইস্যু এবং তা আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর। গুয়ো শুকিং ব্যাংকিংখাতের এই বিপুল ঋণের চাপ দূর করার অঙ্গিকারই করেছেন।
গুয়ো বলেন, ‘বাড়তি তারল্যের চাপ সংযত পর্যায়ে রাখা একজন নেতার দায়িত্ব। আমি যদি এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই, তাহলে অবশ্যই পদত্যাগ করবো।’ ৬৩ বছর বয়স্ক গুয়োর কোনো পূর্বসূরি এতো সাহসী অঙ্গীকার করার সাহস দেখান নি। গুয়ো অঙ্গীকারটি করেছিলেন বর্তমান দায়িত্ব নেয়ার আগেই এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। চীনের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যেই তিনি এমন কথা বলেছিলেন। কনফারেন্স চলাকালিন উপস্থিত কিছু চীনা কর্মকর্তা মার্কিন গণমাধ্যম বøুমবার্গকে অঙ্গীকারের বিষয়টি স¤প্রতি নিশ্চিত করেন। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তেই তারা এসব কথা জানান।
গুয়োর প্রধান লক্ষ্য, আর্থিকখাতেকে স্থিতিশীল রাখা এবং ব্যাংকিং থেকে শুরু করে নন-ব্যাংকিং আর্থিকখাতের দেনা ব্যবস্থাপনায় যে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির প্রচলন আছে, তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। টেকসই অবস্থা নির্মাণে এমন সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। এইজন্য দরকার বাণিজ্যিক ঝুঁকি এবং ঋণের প্রকৃত প্রত্যাবর্তনের মাঝে সুষ্ঠু সমন্বয় ও তদারকি। সেই কাজটাই ধীরে সুস্থে করতে হচ্ছে গুয়ো শুকিংকে। সময়টা এখন তড়িৎ সমাধানের হলেও পা ফেলতে হচ্ছে, যথেষ্ট সাবধান হয়ে। বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন, পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ব্যবসা অনুষদের অধ্যাপক মাইকেল পেট্টিস। ইতিপূর্বে, পেত্তিস বিয়ার স্টার্নস ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, ‘আকস্মিকভাবে বিপুল সরকারি ঋণ গ্যারান্টি বাতিল করা হলে গুয়ো যা চান ঠিক তার উল্টোটাই হবে। এর ফলে বিদ্যমান দেনার নতুন করে সুদহার নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া আর্থিকখাতে বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করতে পারে। গুয়ো শুকিং বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা এবং স্থানীয় সরকার প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে একটি টেকসই আর্থিক ব্যবসার পরিবেশ তৈরির কঠিন কাজটা করছেন। ’ পেত্তিস আরো বলেন, সবচেয়ে ভালো অর্থনৈতিক পরিবেশেও এমন সংস্কারের কাজ খুবই কঠিন। আর এখনতো বাণিজ্য সমরের রণদামামা বাজছে।